‘সে এক রূপ কথারই দেশ, ফাগুন যেথা হয় না কভু শেষ’ এ গানের কলি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিমুলবাগান। এ এক ফাল্গুনেরই বন, যেথায় শিমুল ফুলের রংঙে রাঙা হয়ে থাকে সব সময়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার তাহিরপুরের শিমুল বাগানের একপ্রান্তে দাঁড়ালে অন্যপ্রান্ত দেখা যায় না। সারিবদ্ধভাবে বাগানের গাছের ডালে ডালে মধু খেতে আসছে বুলবুলি, কাঠশালিক, হলদে পাখিরা। পাখির কিচির মিচির ডাক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাগানে। থেকে থেকে ফোটা ফুল মাটিতে পড়ছে, আবার থপ করে একটা শব্দ হচ্ছে। এ যেন সত্যিই রূপকথার এক রাজ্য।
বাগানের প্রতিষ্ঠাতা হাজী জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাখাব আফতাব উদ্দিন বলেন, আমার বাবা বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ১৯৯৮ সালে নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমি বেছে নিলেন শিমুলগাছ লাগাবেন বলে। সে জমিতে তিনি প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ লাগালেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো রুপ নিয়েছে শিমুলবাগানে।
তিনি বলেন, মূলত তার মাথায় ছিল এমন একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলবেন, যা হবে দেশের অনন্য বেড়ানোর জায়গা। সেই সঙ্গে শিমুল বাগানের কাছাকাছি টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ লেক, ট্যাকেরঘাট খনি প্রকল্প, বড়গোফটিলা, যাদুকাটা নদীটি ও মেঘালয় পাহাড় সহজে দেখার সুযোগ পাবে পর্যটকরা। একসময় সীমান্ত এলাকা দুর্গম থাকলেও এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুটা সহজ হওয়ায় প্রায় সারা বছরই লোক সমাগম থাকে পর্যটন সমৃদ্ধ তাহিরপুর সীমান্তে।
রাখাব আফতাব উদ্দিন বলেন, আমরা পর্যটকদের উপযোগী একটি রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছি। এছাড়া যাদুকাটা নদীর তিন মোহনায় একটি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের চেষ্টা করব, যাতে এখানে আসা পর্যটকরা পূর্ণ মাত্রায় আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভুমি হযরত শাহ আরেফিন(রহ.)ও মহাপ্রভু অদ্বৈত্য ধামের মধ্যস্থানে হাজী জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান। এ বাগানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন প্রকৃত সমাজ সেবক যিনি আজন্ম মানুষের কল্যানে কাজ করে গেছেন। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে হলে তার সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে মনে করি।