সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

চট্টগ্রামে গ্যাস-সংকট

বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও ডিমান্ড চার্জ হচ্ছে

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:০১

গ্যাস-সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ। চাপ কম থাকায় দিনের অর্ধেক সময়ও বাসাবাড়িতে রান্নার চুলা জ্বলছে না। কিন্তু তারপরও নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে রাউজান ও শিকলবাহায় তিনটি ইউনিট গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গ্যাস ব্যবহার না করে গত সাড়ে ৩ বছরে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ডিমান্ড চার্জ বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। আবাসিক গ্রাহক খাতে রান্নার চুলা না জ্বললেও গ্রাহকদের দুই বার্নার চুলার ১ হাজার ৮০ টাকা ও এক বার্নার চুলার বিল ৯৫০ টাকা বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

পিডিবি সূত্র জানায় চট্টগ্রামে গ্যাস-সংকটের কারণে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদনে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। গ্যাস না পাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও হচ্ছে না। উৎপাদনে ধস নামায় সরকারি এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। গ্যাস ব্যবহার করলে বিল পরিশোধের বিধান রয়েছে। কিন্তু গ্যাস ব্যবহার না করলেও কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি প্রতি মাসে ডিমান্ড চার্জের নামে বিল ধরিয়ে দিচ্ছে। পিডিবি কর্মকর্তারা জানান, আগে ডিমান্ড চার্জের নামে কোনো বিল আদায় করা হতো না। গত ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের ওপর ডিমান্ড চার্জ বাবদ বিল দেওয়া হচ্ছে। এতে চট্টগ্রামে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিটের ওপর গত ২০২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬০ কোটি টাকা ডিমান্ড চার্জ বাবদ বিল দিয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। গ্যাস বিলের অতিরিক্ত ডিমান্ড চার্জের টাকার বোঝা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সার কারখানাসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি কারখানায় গ্যাস বিলের বাইরে ডিমান্ড চার্জ আদায় করা হচ্ছে।

পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিল মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিই। এখানে পরিশোধ করা হয় না। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির (বিপণন বিভাগ দক্ষিণ) মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, এক সময় শিল্পকারখানায় গ্যাস ব্যবহার করেন বা না করেন ন্যূনতম চার্জ আদায় করা হতো। পরবর্তী সময় সরকার প্রতি ইউনিটে ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ডিমান্ড চার্জের কোনো টাকা পরিশোধ করেনি।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক মাস যাবত সরবরাহ লাইনে চাপ কম থাকায় এমনিতেই শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় ডিমান্ড চার্জের কারণে শিল্পোদ্যোক্তাদের বাড়তি চাপ বহন করতে হচ্ছে।

গত প্রায় ২ মাস যাবত চট্টগ্রামে আবাসিকে খাতে চরম গ্যাস-সংকট বিরাজ করছে। সকাল ১০টার পর থেকে সরবরাহ লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায়  চুলা জ্বলছে না। বেলা দেড়টার পর থেকে চাপ বাড়তে থাকে। তারপরও আবাসিকের গ্রাহকদের নির্ধারিত গ্যাসবিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করায় বেড়েছে গ্রাহকদের জ্বালানি খরচ। বাড়তি ব্যয়ের লাগাম টানতে না পারায় সীমিত আয়ের অনেক মানুষ মাটির চুলা ও কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করছে। গ্যাসের চাপ না থাকায় অনেকেই রান্না ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে মাটির চুলা, ইলেকট্রিক কেটলি, ইলেকট্রিক চুলা ও ওভেন ব্যবহার করছেন। আবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে রান্নার জন্য বিদ্যুৎ খাতে বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামে প্রায় ৬ লাখ আবাসিক সংযোগ রয়েছে। এসব গ্রাহক দুই বার্নার ও এক বার্নার চুলা ব্যবহার করছেন। বর্তমানে দুই বার্নার চুলায় মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা ও এক বার্নার চুলার জন্য ৯৫০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু গ্যাস ব্যবহার না করেও সরকার নির্ধারিত বিল গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। কারণ গ্যাস কী পরিমাণ ব্যবহার হচ্ছে তার ওপর বিল আদায় হয় না। এক্ষেত্রে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীরা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। তবে আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে চট্টগ্রামে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার আছে মাত্র ৬০ হাজার। তাদের বাড়তি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে না।

  • চাহিদা বেড়েছে এলপি গ্যাসের

লাইনের গ্যাস-সংকটে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার বেড়ে গেছে। লাইনের গ্যাসের পাশাপাশি আপদকালীন চাহিদা মেটাতে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন অনেক গ্রাহক। কিন্তু এখন এলপি গ্যাসের দামও বেড়ে গেছে। কারণ ডলারসংকটে এলপিজির আমদানি কম হচ্ছে। এখন খুচরা বাজারে ১২ কেজি ওজনের এলপিজি ১ হাজার ৫০০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ইত্তেফাক/ইআ