শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কবি শাহেদ কায়েস মনে করেন কোনো সম্পর্কই হারিয়ে যায় না

আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৪০

     ‘পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে
     যে মুহূর্তে উচ্চারিত হয়—
     একটি শব্দ— ‘প্রেম’
     জন্ম নেয় নতুন একটি নদী
     বাতাসের নেশায় মাতাল পাখি
     জাহাজের প্রেমে ছোটে দিগভ্রান্ত’

শাহেদ কায়েস মূলত কবি। এখন পুরোপুরি সামাজিক প্রকৌশলী। কাজ করেন মানুষের অধিকার নিয়ে। কবিতায় হাতেখড়ি নব্বই দশকের শুরুতে। থাকেন নিজ গ্রাম সোনারগাঁয়। শখ ভ্রমণ। সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশে। এবারে প্রকাশিত কবিতার বইসহ কথা হয় তার লেখালেখি নিয়ে।

‘এবারে পূর্ণাঙ্গ বই দুটো। একটা পুস্তিকা। নৈরাজ্যবাদী হাওয়া প্রকাশ করেছে চৈতন্য। আরেকটি ভাষাচিত্র থেকে স্বনির্বাচিত কবিতা। ভাষাচিত্র থেকে যেটি এসেছে সেটি তিন জায়গা থেকে প্রকাশ হয়েছে। এই আইডিয়াটা আসলে আমার না। আমার কাছে পাণ্ডুলিপি চেয়েছিলেন তীর্থংকর দাশ। নীহারিকা নামে একটি প্রকাশনা আছে আগরতলাতে।’

‘এখানে একটি ছোট ঘটনা বলি। বীরচন্দ্র পাঠাগার নিয়ে আমাদের একটি মুভমেন্ট ছিল। সরকার আমিন, স্বকৃত নোমান, পিয়াস মজিদ, মোজাফফর আহমেদ সবাই মিলে। এক সময় কুমিল্লা ছিল আগরতলার অধীনে। বীরচন্দ্রের নামে সেই পাঠাগার। সেখানে টাউনহল নামে একটি জায়গা রয়েছে সেখানে অনেক বিখ্যাত লোক গিয়েছেন। তো স্থানীয় এমপি সেখানে একটা মার্কেট করতে চান। ওটা নিয়ে মুভমেন্ট ছিল যে কারণে সেটি ভাঙা হয়নি এবং তা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে চলে যায়। এটা ফেসবুকে আমি লিখেছিলাম। সেটা ওই দেশের পত্রিকা দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। পরে ওখানকার মুখ্যমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টা জানিয়েছেন এবং রেফারেন্স হিসেবে দিয়েছে পত্রিকার কাটিং। সেটা বুদ্ধিজীবী মহলে বেশ আলোচনার জন্ম নেয়।’

‘তো তীর্থংকর বলছেন উনি সব বইতো লাভের জন্য করেন না। করেন ভালোবেসে। আমার শাহেদ কায়েসের পাঠকও রয়েছে সেটা বলতে গিয়েই এই ঘটনাটা তুলে ধরলেন। পরে রাজি হলাম এবং আইডিয়াটা শেয়ার করলেন একই বই তিন জায়গা থেকে করার। কলকাতার কবি বিভাস রায় চৌধুরীর প্রকাশনা সংস্থা ‘কবিতা আশ্রম’ আর বাংলাদেশের ভাষাচিত্র থেকে একই বই নিজেরা কোলাবরেশন করে প্রকাশ করলেন আর কি! একই বই একই কবিতা, শুধু আইএসবিএন আর প্রকাশনা সংস্থার নাম ভিন্ন।’

এর আগে কয়টি বই প্রকাশ হয়েছে?

‘আমার ছয়টি বই রয়েছে। বাঁক ফেরার অভিজ্ঞতা (দোয়েল প্রকাশনী, ১৯৯৯), চূড়ায় হারানো কণ্ঠ (মঙ্গলসন্ধ্যা, ২০০৩), মায়াদ্বীপ (ঐতিহ্য, ২০১৫), কৃষক ও কবির সেমিনার (অভিযান, ২০২০) এবং সহজিয়া প্রেমের কবিতা (অভিযান, ২০২১)। এছাড়া অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইংরেজি ‘এশিয়ার বারটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ (মে এইটিন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, দক্ষিণ কোরিয়া, ২০১৫), ‘মঙ্গলসন্ধ্যা প্রেমের কবিতা’ (সম্পাদিত, ধ্রুবপদ, ২০১৭) ও ‘বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম স্মরণগ্রন্থ’ (ঐতিহ্য, ২০২০)।’

এবারের কবিতার বইটি লিখতে গিয়ে কোনো ঘটনা বা স্মৃতি কি আপনাকে উদ্বেলিত করেছে?

‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়ার মধ্যে অনেকগুলো কবিতার মধ্যে নদী নিয়ে কিবতাটির কথা যদি বলি, আমার বাড়ি সোনারগাঁও। দুটি নদী ও একটি নদ নিয়ে এই এলাকা। শৈশব থেকে এই নদীর কূলে কূলে আমার বেড়ে ওঠা। নদীর যে কান্না সেটা আমাকেও কাঁদায়। সেটি থেকে মনে হয় নদীকে আমরা হত্যা করে ফেলছি। অথচ নদী আমার প্রাণ। সম্পর্ক নামে একটি কবিতা রয়েছে, যেটিতে আমি বলতে চাচ্ছি কোনো সম্পর্কই হারিয়ে যায় না। কারো সাথে যদি ব্রেকআপও হয় সেটিও কোনো না কোনো ফরম্যাটে থেকে যায়। কবিতার শেষ লাইনটি ছিল এমন ‘কেউ কারো থেকে বিচ্ছিন্ন নই’। কবিতাটির দুটি লাইন যদি বলি, ‘পুড়ে গেলেও পড়ে রয় সম্পর্কের পালক/এ ঘরে ও ঘরে পায়চারী করে তোমার ফেলে যাওয়া স্পর্শ।’

আপনার কবিতা মানুষ কেন পড়বে বলে মনে করেন?

‘কবিতা মানুষকে পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। কবিতাকে বলা হয় শুদ্ধতম শিল্প। কবিতার পাঠক বিশুদ্ধ পাঠক। তবে আমার কবিতা কেন পড়বে সেটি আমি সরাসরি বলতে পারবো না। তবে একেকজন মানুষের বেড়ে ওঠা একেকরকম। লেখা বা সাহিত্য সবার লেখা সবার ভালো লাগবে এমন নেই। কবিতার ব্যাপারে এটাতো সত্য এর লাইন-বাইলাইন কোনো ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু কবিতাটি পড়ে একটা বোধ তৈরি হলো কি না সেটাই বড় কথা। সেজন্য ভালো কবিতার কাছে বারবার ফিরে আসি।’

কবিতা লিখে কি আপনি তৃপ্ত?

‘না! প্রথমে একটি কবিতা লিখে মনে হয় একটি ভালো কবিতা লিখে ফেলেছি। কিন্তু কয়েকদিন পর মনে হয় এটি কিছুই হয়নি। অধিকাংশ কবিতার ক্ষেত্রে এটা হয়- লেখার পর একটা প্রেমে থাকি কিছুদিন। পরে একটা সময় এসে মনে হয় কিছু হয়নি।’

শাহেদ কায়েসের জন্ম ঢাকায়, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭০। পৈতৃক নিবাস সোনারগাঁয়ের ললাটি গ্রামে। পড়াশুনা কম্পিউটার বিজ্ঞানে, দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ে। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে, চোন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ‘হিউম্যান রাইটস’ বিষয়ে মাস্টার্স।

ইত্তেফাক/এসকে/পিও