শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

হার্টের সুস্থতাসহ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে ইসলাম

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:২০

হার্ট আল্লাহ তায়ালার অনন্য দান। মানবদেহে রোগের বিস্তার সম্পর্কে কুরআন, হাদিস ও বিজ্ঞানের ধারাসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা করো, কারণ ইমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি। (ইবনে মাজাহ) সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে হার্টের সুস্থতাসহ সর্বপ্রকার রোগবালাই থেকে হেফাজত থাকা জরুরি।

হূদরোগের যতগুলো কারণ রয়েছে, তার প্রতিটির ব্যাপারেই  কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শন। এখানে কিছু তুলে ধরা হলো। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন, ‘অর্থাত্ যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।’ (সুরা শোয়ারা, আয়াত-৮০) রোগাক্রান্ত বান্দাহকে আল্লাহ নিরাময় করবেন। এ কথা আল্লাহ কুরআনুল কারিমে বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ মানুষের প্রতিটি রোগব্যাধির নিয়ামক হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষেধক পাঠিয়েছেন এবং অসংখ্য খাবার উপাদান পাঠিয়েছেন। এ উপাদান যদি মাত্রাতিরিক্ত আকারে কেউ গ্রহণ করে তখনই বাধে সমস্যা। তাই খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

চিকিত্সাবিজ্ঞান অনুযায়ী হূদরোগের প্রধান কারণ হচ্ছে, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, যে কোনো ধরনের ভয়ভীতি, অত্যধিক মদ্যপান, নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ মেডিসিন ব্যবহার এবং অনেক মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। মানুষ যদি ইসলামি অনুশাসন মেনে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে, তাহলে সে আল্লাহর রহমতে নিশ্চয়ই সুস্থ থাকবে। জীবনের নানা পর্যায়ে মানুষ হরহামেশাই নানা ধরনের হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকে, যা মানুষের জন্য বড়ই ক্ষতির কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত-৮৭) আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি পূর্বেও জানামতেই প্রাপ্ত হয়েছি। অথচ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না।’ (সুরা জুমার, আয়াত ৪৯)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি—উত্কণ্ঠা, মনঃকষ্ট, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণগ্রস্ততা ও মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (সহিহ বুখারি) এটা মেনে চললে দুশ্চিন্তাগত কারণে হূদরোগ হবে না। মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য সেবন জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে তথা, হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। অথচ আল্লাহ তায়ালা মাদক ও নেশাকে হারাম করেছেন। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্যনির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্রকার্য বই কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সুরা মায়িদাহ, আয়াত ৯০) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সব নেশাজাতীয় পানীয়ই হারাম। (বুখারি ও মুসলিম) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের েধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিত্সক দ্বারা চিকিত্সা দিতে এবং সবিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিতেন। হারাম বস্তু ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। যেসব কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে, সেসব থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। যেমন অনেক খাদ্য-পানীয় মানুষের রোগব্যাধির অন্যতম কারণ। পেট হলো সব রোগের কেন্দ্রস্থল। ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুত্সাহিত করেছে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তায়ালা  ইরশাদ করেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো এবং অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৩১) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’। (ইবনে মাজা)। খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ না দেওয়া। কারণ এতে রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, ‘খবরদার! তোমরা পানিতে ফুঁ দিয়ো না।’ (তিরমিজি)  খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধৌত করার প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখার জন্য শরীরচর্চামূলক খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাঁতার কাটা ইত্যাদির প্রতিও উত্সাহিত করা হয়েছে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে মানুষের মানসিক সুস্থতাও জরুরি। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উত্ফুল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক উত্কণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,  ‘জেনে রাখো! আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত ২৮)

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কো. লি.

ইত্তেফাক/এসকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন