মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বইমেলায় মুহাম্মদ সামাদের নতুন বই ‌‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্যে কবিতা’

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৩৩

অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদের নতুন বই ‌‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্যে কবিতা: কবিতা উৎসবে ভাষণ ও দশটি সাক্ষাৎকার’। বইটি পাওয়া যাবে নবান্ন প্রকাশনীর ৪৫৫-৪৫৬ নম্বর স্টলে। প্রচ্ছদ করেছেন স্থপতি মুস্তাফা খালীদ অঙ্কিত প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসবের পোস্টার অবলম্বনে নূর নাহিয়ান। মূল্য রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা। 

উৎসর্গপত্রে মুহাম্মদ সামাদ লিখেছেন, সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী জাতীয় কবিতা উৎসবের যাত্রাপথের নিরন্তর প্রেরণাদাত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার করকমলে আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।

বইটির প্রাককথনে কবি লিখেছেন, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাঙালি জাতি দীর্ঘকালীন সামরিক স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে। সেই আতঙ্ক ও সংকট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলেই ধীরে ধীরে দেশে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে । কালের পরিক্রমায় সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। কিন্তু জেল-জুলুম-নিপীড়ননির্যাতনে পিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। দেশ ও জাতির সেই ঘোরতর অন্ধকারকালে, ১৯৮৭ সালে দেশের তরুণপ্রবীণ কবিরা ‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্যে কবিতা’- এই শ্লোগান কণ্ঠে তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির সড়কদ্বীপে জাতীয় কবিতা উৎসব আয়োজন করে স্তিমিত প্রায় আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করেন। সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে কবিতা উৎসব প্রাঙ্গণ দেশের সকল প্রগতিশীল কবি-লেখক-সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ছাত্র-জনতার অনুপ্রেরণার উৎস স্থলে পরিণত হয়। তাই বাঙালির জীবনে জাতীয় কবিতা উৎসব এক অবিস্মরণীয় ঘটনা!

- এভাবে, কবিতা উৎসব কেবলমাত্র বাংলাদেশের নয়- দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এক অনন্য উৎসবের রূপলাভ করেছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের নানান দেশ ও ভাষার কবিরা উৎসবে অংশগ্রহণ করে চলেছেন। ১৯৮৭ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতি বছর পয়লা ও দোসরা ফেব্রুয়ারি জাতীয় কবিতা পরিষদ পঁয়ত্রিশটি উৎসব আয়োজন করেছে । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় জাতীয় কবিতা পরিষদ উৎসবের কণ্ঠে তুলে দিয়েছে নতুন নতুন শ্লোগান বা মর্মবাণী । কবিতা উৎসবের উৎসব সংগীত, ঘোষণাপত্র, ভাষণ-বক্তব্য, নতুন কবিতা ও সেমিনার-আলোচনা নব-নব মর্মবাণীকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে চলেছে।

কবি মুহাম্মদ সামাদ

প্রথম কবিতা উৎসবের আহ্বায়ক ছিলেন বাংলা ভাষা-সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান; উৎসব উদ্বোধন করেন কবি সুফিয়া কামাল এবং সভাপতিত্ব করেন কবি আবুল হোসেন। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, শুরুতে ‘প্রাক প্রস্তুতি কমিটি’র সদস্য হিসেবে ইউসুফ হাসান, মোজাম্মেল বাবু, তারিক সুজাত, শ্যামল জাকারিয়াসহ কয়েকজন তরুণ কবিতাকর্মী মিলে আমাদের প্রগতিমনা অগ্রজ কবিদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজে উদ্যোগী হন। এদের মধ্যে শিল্পী ইউসুফ হাসান কবিতা পরিষদের লোগো তৈরি করে দেন। প্রথম উৎসব আয়োজনের লক্ষ্যে কবি সুফিয়া কামাল, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, রফিক আজাদ, মোহাম্মদ রফিক, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, সাযযাদ কাদির, হুমায়ূন আজাদ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, মোহর রায়হান, জাফর ওয়াজেদ প্রমুখকে নিয়ে একটি আহ্বায়ক পরিষদ গঠন করা হয়েছিলো। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলা একাডেমি বইমেলা প্রাঙ্গণে এক সন্ধ্যায় শামসুর রাহমান ও মোহাম্মদ রফিককে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। প্রথম কমিটির নির্বাহী সদস্য থেকে শুরু করে নানা দায়িত্ব পালনের পরম্পরায় আমিও সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হই।

দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনের সূত্রে, সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ধারণ করে সৃষ্ট জাতীয় কবিতা উৎসবের শ্লোগান বা মর্মবাণীর আলোকে লিখিত আমার ভাষণ এই গ্রন্থের প্রথম পর্বে; আর নানা সময়ে দেয়া আমার দশটি সাক্ষাৎকার দ্বিতীয় পর্বে গ্রথিত হলো। বলা বাহুল্য, কিছু পুনরাবৃত্তি হলেও সাক্ষাৎকারগুলো হুবহু রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

গ্রন্থের পরিশিষ্টে আমার রচিত চারটি ঘোষণাপত্র, ছয়টি উৎসব সংগীত; এবং ১৯৮৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩৫টি কবিতা উৎসবের শ্লোগান বা মর্মবাণীযুক্ত করা হলো। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সাল থেকে একাধারে ১২টি উৎসব উদ্বোধন করেছেন জাতির সকল সংকটকালের জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল। ১৯৯৭ সালে উৎসবে উপস্থিত হতে না-পেরে তিনি একটি আশীর্বাণী দিয়েছিলেন যা ছিলো জাতীয় কবিতা উৎসবে তাঁর একমাত্র লিখিত বক্তব্য। অন্যদিকে, আমাদের দ্বিতীয় উৎসবে, জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি শামসুর রাহমান প্রথম লিখিত ভাষণ প্রদান করেন।

বাংলাদেশের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ইতিহাসের তাৎপর্য বিবেচনায় কবি সুফিয়া কামালের অমূল্য আশীর্বাণী ও শামসুর রাহমানের মূল্যবান বক্তব্যও গ্রন্থের পরিশিষ্টে সন্নিবেশিত হলো। আমার কবি বন্ধু ও জাতীয় কবিতা উৎসবের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সৃষ্ট শ্লোগান অবলম্বনে গ্রন্থের নামকরণের জন্যে তাঁকে ভালোবাসায় স্মরণ করি। স্থপতি মুস্তাফা খালীদ অঙ্কিত প্রথম কবিতা উৎসবের পোস্টার অবলম্বনে গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছেন তরুণ গ্রাফিক ডিজাইনার নূর নাহিয়ান। তাঁদের জন্যে আমার শুভকামনা রইলো।

বইমেলায় নবান্নের স্টলে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন কবি মুহাম্মদ সামাদ। ছবি: আমিনুর রহমান সুলতান

এই গ্রন্থ প্রকাশে আমাকে উৎসাহিত করেছেন আমার স্ত্রী রীমা, ড. আমিনুর রহমান সুলতান, ড. শেখ মেহেদী হাসান, কবি পিয়াস মজিদ ও চিত্রশিল্পী ফারজানা আহমেদ। তাঁদের সবাইকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। আমার অনুজ তুল্য জনাব একেএম আফতাবুজ্জামান অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন। গ্রন্থের প্রথম অংশের লেখাগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে কম্পোজ করেছেন জার্নিম্যান-এর জনাব মো. আকতার হোসেন। তাঁদের কাছে আমার ঋণ অপরিশোধ্য।

গ্রন্থটি সযত্নে প্রকাশের জন্যে নবান্ন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সাহেলী তাসিমা ফিরদৌসকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

ইত্তেফাক/পিও