শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

উন্নয়নের জন্য বিভাজন নহে, ঐক্যবদ্ধ থাকিতে হইবে

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:১৮

একদিকে অন্যায়ের প্রশ্রয়, অন্যদিকে অনৈক্য—এই দুইটি বৈশিষ্ট্য একটি জাতির উন্নত হইবার পথে সবচাইতে বড় বাধা। ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে তৃণ সম দহে’—কথাটি বলিয়া গিয়াছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর ঐক্যের অভাব ঘটিলে কী হইতে পারে—ইহা লইয়া অসংখ্য নীতিগল্প ও ধর্মীয় কাহিনি রহিয়াছে। মনে রাখিতে হইবে মহান আল্লাহ তাআলা অন্যায়ের সহিত আপস করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আল্লাহ বলিয়াছেন, নিজের ভাগ্য নিজেকেই গড়িতে হয় এবং তাহা পরিশ্রম করিয়া আদায় করিতে হয়; কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে অনেক অঞ্চলেই গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে হয় না। ইহার কারণ, যেই ঠিকাদাররা কার্যাদেশ পান তাহারা অনেক ক্ষেত্রে কাজ বিক্রয় করিয়া দেন। নিজেরা কাজ না করিয়া অনভিজ্ঞ-অর্বাচীনদের দিয়া দায়সারাভাবে নামকাওয়াস্তে কাজ শেষ করেন। ইহা ভয়ানক অন্যায়। আমরা যখন দেখিতে পাই, কাজ না করিয়া বা অর্ধসমাপ্ত রাখিয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাহারা সরকারি অর্থ তুলিয়া লইতেছেন, তাহাদের মনে রাখিতে হইবে—এই দিন দিন নহে। কালোটাকা লইয়া যাহারা রাজনীতি করিতে চাহেন, মনে রাখিতে হইবে, তাহাদের দুর্নীতির ফাইলও তৈরি রহিয়াছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতা অকল্পনীয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সময়মতো এই যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাজিয়া উঠে। এমনকি এই সমস্ত ব্যক্তি রং বদলাইয়া রাতারাতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে সরকারি দলের অন্দরে অনুপ্রবেশ করিয়া সরকারের সহায়তা লইবার চেষ্টা করিলেও, একদিন তাহারাও রেহাই পাইবেন না। ইহা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

সুতরাং দেশের মানুষকে শোষণ করিয়া যাহারা অর্থসম্পদ সৃষ্টি করিয়াছে সময় থাকিতে নিজেদের শুধরাইয়া লওয়া উচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ অব্যশই মানসম্মতভাবে সম্পন্ন হইতে হইবে। ‘সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল’—এই ভাবনার যুগ শেষ হইয়া গিয়াছে। সুতরাং যাহারা নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতি করিতেছেন, তাহাদের সাবধান হইতে হইবে। তাহাদের অন্যায়-দুর্নীতি-অনিয়মের মাফ নাই। রাষ্ট্রযন্ত্র একটি সময় আসিয়া তাহাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেই। ইহার সহিত জনগণকেও সচেতন হইতে হইবে। নির্মাণকাজে কোথাও অনিয়ম-দুর্নীতি হইলে তাহাদের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিকদের রুখিয়া দাঁড়াইতে হইবে, প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিতে হইবে। আমরা না জাগিলে অন্ধকার দূর হইবে না। এই জন্য কাজী নজরুল ইসলাম বলিয়াছেন—‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’ সুতরাং একজন নাগরিক হিসাবে আমাদেরও কর্তব্য রহিয়াছে অনিয়মকারীর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় লইয়া মামলা করিয়া আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা। ইহাদের বিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এই জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকিতে হইবে। সচেতন জনগণ যদি ‘এক’ থাকে, তাহা হইলে তাহাদের ভাগ্য লইয়া কেহ ছিনিমিনি খেলিতে পারিবে না। মনে রাখিতে হইবে, উন্নয়নকাজের প্রশ্নে কোনো রাজনীতি করা উচিত নহে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হইলেও আমাদের এখনো অনেক কাজ বাকি রহিয়াছে। লুটপাট বন্ধ করা না গেলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নকাজ কখনই সম্পন্ন করা যাইবে না। আর ইহার জন্য প্রয়োজন সকলের ঐক্য। মহাবিশ্বের দিকে তাকাইয়া আমরা দেখিতে পাই, পুঞ্জীভূত মহাশক্তিই এই জগতের প্রতিটি স্তরে স্তরে। সুতরাং ঐক্যই হইল জগতের সবচাইতে বড় শক্তি। ইসলাম ধর্মেও পারস্পরিক ঐক্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতিকে অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং মানবজাতির জন্য কল্যাণকর বলিয়া মনে করা হয়। ইসলামে মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। এই ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখিবার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলা বলিয়াছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা-৪৯ হুজরাত, আয়াত: ১০) ‘এই যে তোমাদের জাতি, এই তো একই জাতি আর আমি তোমাদের পালনকর্তা, অতএব তোমরা (ঐক্যবদ্ধভাবে) আমারই ইবাদত কর।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৯২)।

সুতরাং দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যসাধন প্রয়োজন। যেই এলাকায় জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ রহিয়াছে, সেই এলাকার মানুষ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের স্বাদ পাইতেছে। অতএব বিভাজন নহে, ঐক্যই উন্নয়নের সবচাইতে বড় সহায়ক।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন