শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

নিজের ওজন বুঝিয়া কথা বলা কেন প্রয়োজন

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:২৯

আমাদের সকল সময় নিজের ওজন বুঝিয়া বা মাপিয়া কথা বলা উচিত। ইহাতে নিজে সুখে থাকা যাইবে, আবার অন্যকেও অসুখী বা অপ্রকৃতিস্থ করা হইবে না। আমরা রাজনীতির ক্ষেত্রে ঐক্য বা জোট যাহাই করি না কেন, এই কথা সকল সময় মনে রাখা বাঞ্ছনীয়। অবশ্য ব্ল্যাকমেইলের অভিসন্ধি থাকিলে তাহা ভিন্ন কথা। অনেক সময় আমরা এমন বেফাঁস কথাবার্তা বলি যে, নিজের ভুলের বেড়াজালে নিজেরাই জড়াইয়া পড়ি। যেমন, গত জাতীয় নির্বাচনটা সঠিক হয় নাই—এমন কথা একজন এমপি বলিবামাত্র এই প্রশ্নটাও উঠিয়াছিল যে, তাহা হইলে তিনি পদত্যাগ করিতেছেন না কেন? অনুরূপভাবে ১৪ দলীয় জোটচর্চা লইয়া যেই কথা উঠিয়াছে, তাহাতেও একই প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক নহে যে, তাহা হইলে আমরা সেই জোটে রহিয়াছি কেন? ইহা কি স্ববিরোধিতা নহে?

এই ভারতীয় উপমহাদেশে এমন কোনো দেশ নাই, যেইখানে বিভিন্ন দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করিতেছে না। ইহা তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এক কঠিন ও অপরিহার্য বাস্তবতা। জোটের রাজনীতিই হইয়া উঠিয়াছে ভোটের রাজনীতি। কেননা, নির্বাচনের রাজনীতিতে দেখা যায়, কোনো কোনো আসনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে নির্ধারিত হয় জয়পরাজয়। যেইহেতু এই সকল আসনে ভোটের ব্যবধান খুবই কম, তাই ছোট ছোট দলগুলির সঙ্গে ঐক্যজোটের গুরুত্ব অপরিসীম। জোটের ভোট পাইবার কারণে সেইখানে জয়লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। জোট করিবার অর্থ যে নির্বাচনে সকল সময় জিতিতে হইবে, তাহাও নহে। হারিলেও যাহাতে তাহা সম্মানজনক হয়, সেই দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। মন্ত্রিত্ব দেওয়া হইবে—এমন কথা মহাজোট গঠনের সময় বলা হয় নাই; বরং বলা হইয়াছিল যে, জোটবদ্ধ দলগুলি প্রয়োজনে নিজের প্রতীকে নির্বাচন করিতে পারিবে, আবার জোটভুক্ত বৃহৎ দলের প্রতীকও ব্যবহার করিতে পারিবে। সুতরাং আজ কেন বলা হইবে, তাহাদের প্রতীকের জন্য ভোট চাওয়া হইল না? প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজ নিজ প্রতীকে ভোট চাহিবেন, ইহাই স্বাভাবিক নিয়ম। নিজেদের ওজন মাপিয়া কথা না বলিলে অনেক সময় রাজনৈতিক চালে ভুল হইতে পারে। এমনকি মাপের মধ্যেও পার্থক্য রহিয়াছে। আমরা কী দিয়া নিজেদের মাপিতেছি, তাহাও একটা বড় প্রশ্ন। শোনা যায়, আগা খান নিজেকে স্বর্ণ দিয়া মাপিতেন। নির্বাচনের রাজনীতিতে ছোট দলগুলি কি সেইরূপ মূল্যবান হইয়া উঠিতে পারিতেছে? প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কি তাহাদের নেতাকর্মী ও ভোটার রহিয়াছে? যদি না থাকে, তাহা হইলে জোটবদ্ধ থাকিয়া যেইটুকু কদর পাওয়া যায়, তাহা লইয়াই সন্তুষ্ট থাকা কি উচিত নহে? নিজের শক্তিতে বলীয়ান হইবার কথা বলা হইলেও আমরা কতটা শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারিতেছি? 

অনেকে মনে করেন, মহাজোটের বাকি দলগুলি শূন্য। আর শূন্যের কোনো মূল্য নাই। এই কথা সঠিক নহে। শুধু শূন্যের মূল্য নাই বটে, তবে ইহা কোনো সংখ্যার পরে বসিয়া তাহার মূল্যমান বাড়াইতে পারে বহুগুণ। কুষ্টিয়ার এক সভায় মহাজোটভুক্ত একটি দলের শীর্ষনেতা একবার বলিয়াছিলেন যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আশি পয়সা। আর অন্যরা মিলিলে এক টাকা হয়। যদি তাহারা না থাকেন, তাহা হইলে আশি পয়সা লইয়া বৃহৎ দলটিকে রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করিয়া ঘুরিতে হইবে। কিন্তু গত নির্বাচনে সেই দলটি আড়াই শতাধিক আসনে জয়লাভ করায় উহা তাহাদের জন্য বুমেরাং হইয়াছে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না।

মোদ্দা কথা, আমাদের কথা বলিতে হইবে প্রয়োজনমাফিক। কথা বলিবার আগে আমাদের এক বার হইলেও চিন্তা করা দরকার, আমরা কী বলিতেছি। ইহাতে আমাদের লাভ না ক্ষতি? আবার আত্মসম্মান বজায় রাখিয়াও কথা বলা উচিত। ইহাই আসলে নিজের ওয়েট বা ওজন বুঝিয়া কথা বলা। একই সঙ্গে আমরা গভীরভাবে ভাবিলে দেখিতে পাই, আমাদের ওজন বলিয়া আসলে কিছু নাই! মধ্যাকর্ষ শক্তি আমাদের কতটা টানিতেছে তাহাই হইল ওজন। কেহ যদি বৃহৎ শক্তির অভিকর্ষ বল দ্বারা নিজের ওজন ঠিকমতো মাপিতে পারেন, তাহা হইলে ভিন্ন কথা হইতে পারে।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন