রূপের নদী যাদুকাটা। এ যেন এক মায়া জল। সন্ধ্যায় রক্তিম আভায় জলের রূপ অন্যরকম। দিনের আলোয় কখনো গাঢ় সবুজ। আবার কখনো আয়নার মতো প্রবহমান স্বচ্ছ জল। জলের নিচে বালি ও ছোট ছোট পাথর। দেখলে মনে হয় হাত বাড়ালেই কুড়িয়ে তোলা যায়। কিন্তু এ পাথরের অবস্থান পানির বেশ গভীরে। এলাকাটি পর্যটনসমৃদ্ধও। কিন্তু নদীর নানা স্থান ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌচলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পাথরশ্রমিকরাও কষ্টে আছেন। তাদের আয় রোজগার প্রায় বন্ধ।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানালেন, যাদুকাটা নদীর নাব্য সংকট প্রকট। হেমন্তে যাদুকাটার পানি শুকিয়ে গিয়ে নদী ছোট হয়ে আসে। এ সময় নৌজটের সৃষ্টি হয়। পণ্য পরিবহনে সমস্যা ও সেচসংকটও দেখা দিয়েছে। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে নদী থেকে বালু সরিয়ে নেওয়া জরুরি। স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, পাহাড়ি এ নদীটি খনন হলে বর্ষায় ঢলের সঙ্গে সীমান্তের অপার থেকে বালি ও পাথর আসবে বিনা বাধায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব জোন) এস এম শহীদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, যাদুকাটা নদী খননের জন্য সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষার পর খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, নদীটি খনন হলে এই অঞ্চলের জীবন-জীবিকায় গতি আসবে।
উত্তর ভারতের বিশাল খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নেমে এসেছে যাদুকাটা নদী। এক সময়ের প্রবহমান যাদুকাটা নদীর পশ্চিমে অপরূপ সৌন্দর্যের বারেক টিলা। বর্ষায় নদীর উন্মত্ততায় পিলে চমকে যায়। হেমন্তের হিমশীতল জলের কাছে চিকচিক বালুর দৃশ্য পর্যটকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এটি শুধু পর্যটন স্পটই নয়। আবহমান কাল থেকে এই নদী থেকে মাছ, কয়লা, বালি পাথর উত্তোলন করে সাধারণ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু গত এক বছর থেকে নদী ভরাটের কারণে সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভালো নেই বালু, পাথরশ্রমিক ও ক্ষুদ্র পাথর ব্যবসায়ীরা। এক সময় নদীটি ছিল পূর্ণ মাত্রায় জীবন-জীবিকার উৎস। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই।
এদিকে নদী দিয়ে ভেসে আসা কয়লা উত্তোলন ও নদীর কিছু অংশ ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। হিমশীতল পানিতে ঠ্যালা জালে সারা দিন গলা সমান পানিতে দাঁড়িয়ে হাজারো নরনারী, শিশু, যুবক কয়লা তুলে বিক্রি করেন। এতে চলে তাদের সংসার। কিন্তু নদী স্থানে স্থানে ভরাট হওয়ায় এসব কয়লা, বালিবাহী নৌযান চলাচল করতে পারছে না। আবার ভরা বর্ষায় নদীতে ঢল নামে। সেই ঢলে নদী-তীরবর্তী বসতি হুমকির মুখে পড়ে। এরই মধ্যে অনেক গ্রাম বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে ভেসে গেছে।
মানিগাঁও গ্রামের নারী শ্রমিক দিলনাহার বেগম বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নিয়া কষ্টে দিন কাটে। নদী বন্ধ হলে চুলা বন্ধ।’ শিক্ষার্থী রেজাউল মিয়া জানান, নদীতে কয়লা কুড়িয়ে সারা দিনে ৩০০-৩৫০ টাকা রোজগার হয়। এতে মা-বাবার সাহায্য হয়।