সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিয়ের গীত

আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৩, ০৩:১৩

ছেলেমেয়ের বিয়ে হবে আর গীত হবে না—এটি ভাবাই যেত না। সৈয়দপুরের গ্রামীণ জনপদের সর্বত্র এই ছিল প্রচলিত রীতি। গায়ে হলুদ থেকে শুরু হতো এই গীত। গীতে বিয়ে বাড়ি হয়ে উঠত আনন্দময়। সেই আনন্দ এখন আর চোখে পড়ে না। গীতের স্থান দখল করেছে ডেক সেট। বাজানো হচ্ছে ঝাকানাকা গান। গ্রামের বয়স্করা বংশানুক্রমে এই গীত পরিবেশন করে আনন্দ করতেন। তাত্ক্ষণিকভাবেও রচিত এ গানগুলো লোকসংস্কৃতির এক অমূল্য ভান্ডার হিসেবে বিবেচিত। 

পক্ষ থেকে বিদায় দেওয়া পর্যন্ত কনের বাড়িতে গীত গাওয়ানো চলে। বরের বাড়িতে গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে পরের দিন বৌভাত পর্যন্ত বিয়ের গীত চলে। বরের বাড়িতে বউ নিয়ে আসার পরের দিন ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধ, নারীসহ অনেকে বিয়ের গীত ও রংমাখা, কালি মাখাসহ নাচগান করে আনন্দে মেতে উঠেন। উপজেলার কামারপুকুরের শত বছরের বৃদ্ধ নজির হোসেন বলেন, আধুনিকতার কারণে গ্রামের বিয়ের গীত গাওয়ার প্রথা প্রায় উঠে যাচ্ছে। এক সময় এই গীত ছাড়া গ্রামে বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। পরবর্তী সময়ে হিজড়ারা নিজেদের ঢংয়ে এসব গীত গাইতে থাকেন। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে মানুষ এখন গ্রামীণ প্রচলন ভুলে যাচ্ছে। নীলফামারী জেলার কিছু এলাকায় এখনো প্রচলন রয়েছে বিয়ের গীত ও বরকনে খেলা।

উপজেলার এক গ্রামের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা গেল, নারীরা কনেকে বসিয়ে রেখে পুরুষ  সেজে নাচ করছেন। গীতের মাধ্যমে বরকনের কথা বলছেন। ভাবি-ননদের নানা কথা বলছেন। নিজেদের ছন্দ ও সুরে এসব গীত চলছে। এখানে নারীরা গীত ঠিকমতো করতে না পারায় পুরুষ গীতালি (যে গীত গায়) ভাড়া করে আনা হয়েছে।  

সৈয়দপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বিয়ের গীত কি জিনিস, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকবে না। তারা শুধু বাবা, মা, দাদা-দাদির কাছে গল্প শুনে জানবে বিয়ের গীতের কথা।  

 

ইত্তেফাক/ইআ