শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

বিমানবন্দরের ই-গেট সেবা 

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০০:২৭

একটি দেশের অর্থনীতিতে স্থল, নৌ, সমুদ্র ও বিমানবন্দরের গুরুত্ব সর্বাধিক। বিশেষ করিয়া দ্রুত যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের জন্য বিমানবন্দরের বিকল্প নাই। এই বিমানবন্দর হইল যে কোনো দেশের দর্পণস্বরূপ। দর্পণ বা আয়নায় যেমন নিজের চেহারা দেখা যায়, তেমনি কোনো বিদেশি নাগরিক কোনো দেশের বিমানবন্দরে নামিয়াই সেই দেশ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা লাভ করেন। এই জন্য একটি দেশের বিমানবন্দর যত আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন হইবে, ততই সেই দেশে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়িবে, বিশ্বে উজ্জ্বল হইবে সেই দেশের ভাবমূর্তি। বর্তমানে আমাদের প্রধান বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে আগাইয়া চলিতেছে। বলা হইতেছে, অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এই টার্মিনাল চালু হইলে সারা বিশ্বে আমাদের মান-মর্যাদা আরো বাড়িবে। বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় দ্রুত অগ্রসর হইয়াছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের বদলে আরো এক ধাপ আগাইয়া স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান দেওয়া হইতেছে। এই অবস্থায় দেশের প্রধান বিমানবন্দরের ই-গেট সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হইবার খবর কি কাহারও ভালো লাগিবে?

গতকাল ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হইয়াছে যে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৯ মাস আগে ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য ই-গেট সেবা চালু হইলেও বর্তমানে ইহার সুফল মিলিতেছে না। মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রীয় ই-পাসপোর্টের সঙ্গে ই-গেট সার্ভারের সংযুক্তি লইয়া দেখা যাইতেছে জটিলতা। ইহাতে ই-গেট সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকিবার কারণে যাত্রীরা আবার ম্যানুয়ালি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করিতেছেন। ইহাতে আগের মতো তাহাদের ভোগান্তি বাড়িতেছে। যেইখানে ই-গেটের  মাধ্যমে মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করিবার কথা, সেইখানে এখন এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগিতেছে। তাই ই-গেটের সুফল যাত্রীরা কেন পাইতেছেন না, তাহা তদন্ত করিয়া দেখা প্রয়োজন। বিশেষ করিয়া ইহার ২৭টি গেট একসঙ্গে কীভাবে অচল থাকে? 

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট চালু হইবার পর আমাদের জানামতে, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও ইহার প্রচলন হইয়াছে। আশার কথা হইল, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ই-গেট প্রথম চালু হইয়াছে বাংলাদেশেই। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হইল পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন ও অথেনটিকেশন। ই-গেটের কল্যাণে এই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়। ই-পাসপোর্টধারী একজন যাত্রী প্রথমে পাসপোর্টের ডিজিটাল ছবিযুক্ত পৃষ্ঠা ই-গেটের মনিটরে স্পর্শ করামাত্র ১০-১৫ সেকেন্ডের মধ্যে তাহার জন্য খুলিয়া যাইবে কাচের দরজা। ই-গেট দিয়া প্রবেশ করিবার পর স্ক্যানিং গেটের সম্মুখে দাঁড়াইবার মাত্র পাঁচ-ছয় সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য ভেরিফাইড হইয়া যাইবে। ইহার পর গেট খুলিয়া যাইবার সঙ্গে সঙ্গে সম্পন্ন হইবে ইমিগ্রেশন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ পাসপোর্টধারীকে দেওয়া হইয়াছে ই-পাসপোর্ট। আরো প্রায় ১ কোটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) রহিয়াছে। যেহেতু ই-পাসপোর্টধারীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়িতেছে, তাই বিমানবন্দরের ই-গেট সেবা কেন মাঝেমধ্যে অচল থাকিবে? এই সুবিধা বরং আরো সম্প্রসারণ ও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বলা হইতেছে, গত জুন মাস হইতে চলতি বৎসরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মোট ৯৫ হাজার যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করিয়াছেন। অথচ এই বিমানবন্দর দিয়া শুধু এক মাসেই গড়ে ৫ লক্ষ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। অর্থাৎ, হিসাবে দেখা গিয়াছে, মোট যাত্রীর মাত্র ২ শতাংশ ব্যবহার করিতেছেন ই-গেট সুবিধা!

স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান বাস্তবায়ন করিতে হইলে আগে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ যত প্রকারের বন্দর আছে, সেখানে ই-গেটের বাস্তবায়ন একান্ত কাম্য। আমরা আশা করি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট সেবা কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু থাকিবে। ই-গেট বন্ধ দেখিয়া কেহ আর যেন ফিরিয়া না যান। একই সঙ্গে এই সুবিধাকে কার্যকর করিতে হইলে সমগ্র ইমিগ্রেশন পদ্ধতিকে অটোমেশনের আওতায় আনিতে হইবে। এই জন্য ই-গেটের সহিত আন্তর্জাতিক ভিসা ও পাসপোর্ট-সংক্রান্ত নেটওয়ার্কেরও সংযোগ থাকা প্রয়োজন।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন