শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

পথশিশুদের বন্ধু নিপা

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৫

পথশিশু, অসহায়, দুস্থ ও নির্যাতিত মানুষের জন্য তার খুব মায়া। যখন যেভাবে পারেন তাদের সাহায্য করেন। ছোট একটা চাকরি  করতেন। এমন কিই-বা বেতন। সেই বেতনের টাকায় পথ শিশুদের জামা কিনে দিতেন। মানবপ্রেমী এ মানুষটির নাম তাছলিমা ইসলাম নিপা। ইডেন মহিলা কলেজে মনোবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সের ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন সমাজকর্ম করে আসছেন। কখনো নিজে, কখনো-বা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে। 

ইউনিসেফের মাধ্যমে অবহেলিত শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, বস্তিবাসী  শিশুদের জন্য টিকার কাজ করেছেন। কোনো সংস্থার ব্যানারে এটা তার প্রথম কাজ। কাজ করতে করতেই মাথায় বুদ্ধি আসে—  শিশুদের নিয়ে তো আমি আরো অনেক কাজ করতে পারি। বলেন তাছলিমা ইসলাম নিপা।

ঈদের আনন্দ তো সবার। পথশিশুরা বাদ যাবে কেন। কেন তাদের গায়ে ছেঁড়া জামা পড়া থাকবে। ঈদের আগে নিপা নতুন জামা তাদের উপহার দিতেন। তিনি বলেন, ‘সাধ্য অনুযায়ী ঈদ এলে আমি একাই পথশিশুদের মধ্যে পোশাক বিতরণ করি। সালামি দেই। খাবারেরও আয়োজন করি। যেন আনন্দের কোনো  অংশ থেকে তারা বাদ না যায়। নিজের আয়ের টাকায়ই এসব করতাম।’ নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ধর্ষণ সহ নানা অপরাধের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সভা সমাবেশে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মেয়েরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ বিষয়টা তাকে খুব ব্যথিত করে বলে জানান। জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশ বেশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠছে। এ বিষয়টা নিয়ে তিনি মানুষকে সচেতন করছেন। Friday for Future-এর সাথে তিনি যুক্ত। 

বয়স্ক মানুষ। যারা নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার। হতে পারে সেটা আপনজন দ্বারাও। ব্রাইটার সোসাইটি এমন মানুষদের নিয়ে কাজ করে। নিপা ২০১৭ সাল থেকে এ সংগঠনের ব্যানারে কাজ করে আসছেন। 

২০১৮ সালে তিনি ইউনিসেফের ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দেন। শূন্য থেকে ৫ বছরের শিশুদের ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, প্রেগন্যান্সির সময় মায়েদের পুষ্টি নিশ্চিত করার কার্যক্রমেও তিনি অংশ নেন। কোভিডের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য তিনি বস্ত্তিবাসীদের সচেতন করেন। তাদের টিকা দিতে সহযোগিতা করেন। তিনি বিডিক্লিনের একজন সক্রিয় সদস্য। বিডিক্লিন  পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করে। শহরটাকে পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে মানুষকে উত্সাহিত করে।

বিডিক্লিনে কাজ করা প্রসঙ্গে নিপা বলেন, ‘এখানে কাজ করার মধ্যে আনন্দ এবং শ্রদ্ধা দুটোই কাজ করে। যখন বাসা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট পরিষ্কার দেখি তখন নিজের মনও শান্তি পায় এবং আনন্দ লাগে।’

হিউম্যান এইড নামে একটি সংগঠন লকডাউনের সময় জনসাধারণকে সচেতনতায় কাজ করে। তারা কিভাবে ২০ সেকেন্ডে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হয় তার ক্যাম্পেইন করে। এ ক্যাম্পেইনেও নিপা অংশ নেন। তিনি ১০ দিন বিভিন্ন থানার সামনে গিয়ে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেন।  অসহায় মানুষের পাশে থেকে সাহস যোগান। বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী দেন। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সময় নিপা  প্রতিদিন মিরপুর থেকে উত্তরা BNS Center-এ গিয়ে আন্দোলনে  যোগ দিতেন। কিছু মিডিয়া তার সাক্ষাৎকার নেয়। এরপর তিনি নানাভাবে হুমকি পান—যেন এসব বন্ধ করা হয়। কিন্তু প্রতিবাদী নিপা আরো সক্রিয় হন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জায়গায় অটল ছিলাম। আমাকে নানাভাবে দমন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।’  

নিপা মনে করেন, প্রতিটি মেয়ের উচিত সমাজের যেকোনো সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন