বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

রঙিন হচ্ছে বিদ্যালয়গুলো

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১৩:৩২

শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে আকৃষ্ট করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত উন্নয়ন ও মেরামতের টাকায় রঙিন করে তোলা হচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় প্রতিটি স্কুলের প্রবেশমুখ ও দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলা-ইংরেজি বর্ণ।

শ্রেণিকক্ষ ও ভবনের চারপাশে জাতীয় ফলমুল, দেশ-প্রকৃতি, ছোটদের মিনা কার্টুনসহ নানা মনীষীর ছবি। এমনিভাবেই রঙ-তুলির আঁচড়ে স্কুলগুলো শিশুবান্ধব করার সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ছোটবেলা থেকেই শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে, জানছে দেশ-প্রকৃতি সমন্ধে। অপরদিকে, বেশি করে স্কুলগামী হচ্ছে কমলমতি শিশুরা।

সরেজমিন বিভন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলো রঙিন করে সাজানো হয়েছে। রঙ-তুলির ছোঁয়ায় বিদ্যালয়গুলো এখন যে কারো দৃষ্টি কাড়ে। পর্যায়ক্রমে সব স্কুলের আঙিনায় স্থাপন করা হচ্ছে শহীদ মিনার। অনেক বিদ্যালয়ের দেয়াল যেন রংধনুর সাতরঙে রাঙানো। মাঝে মাঝে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছবি আঁকা। শিক্ষার্থীরা স্কুলে প্রবেশের আগে এসব ছবির মনীষীদের সাথে পরিচিত হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয়েছে ছোটদের মিনা কার্টুন, ফুল-ফল ও পশু-পাখির ছবি। এছাড়া প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে আঁকা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও গুণীজনের প্রতিকৃতি। লেখা আছে নানা ধরণের নীতিবাক্য। কোথাও পাশেই দাঁড়িয়ে গভীর মনযোগ সহকারে ছবি আঁকা দেখছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

ইতিমধ্যেই সিরাজগঞ্জ জেলার অধিকাংশ স্কুলে এমন আঁকিবুঁকির কাজ করা হয়েছে। সরকারি ব্যয়ে পর্যায়ক্রমে সকল স্কুলে এমন কাজ করা হবে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।

কয়েল গাঁতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা, মৌ, হাবিব, ইসমাইল বলে, ‘এখন স্কুলে এসে আর বিরক্ত লাগে না। সাজানো গেছোনো বিদ্যালয়, এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের। একই সাথে এ স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরে আমরা খুব খুশি। এখন স্যাররা যতক্ষণ ছুটি না দেয় ততক্ষণ আমরা স্কুলে থাকি। স্কুল সুন্দর হয়েছে, তাই এখন স্কুলে আসতে ভালো লাগে।

মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতারী খানম জানান, সুন্দর মন, সুস্থ পরিবেশ খুব বেশি প্রয়োজন। স্কুলের পরিবেশ সুন্দর হওয়ায় পড়াশোনায় মনযোগী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে শিশুরা বেশি করে স্কুলমুখী হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আনন্দের সাথে পড়াশোনা করছে তারা। এমন উদ্যোগে শিক্ষকরাও উদ্দীপ্ত।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাইয়ার সুলতানা জানান, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিইডিপি-৪ এর আওতায় (স্লিপ ফান্ড) থেকে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছে। তাছাড়া ছোটখাটো মেরামতের জন্য অনেক বিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে। এ টাকায় সদরের সকল স্কুলে শিশুবান্ধব করার কাজ চলছে। শিশুরা যেন আনন্দঘন পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে স্কুলগুলোর ভেতরে-বাইরে সংস্কার চলছে, রঙ-তুলির কাজ চলছে। বিবর্ণ-মলিন স্কুলগুলো হয়ে উঠছে ঝকঝকে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল মন্ডল জানান, শিশুদের শৈশবকে আক্ষরিক অর্থেই সাতরঙা করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে সিরাজগঞ্জ জেলার ১ হাজার ৬৭২টি  বিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানো হবে।

ইত্তেফাক/এসকে