শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

পবিত্র শবেবরাতের প্রার্থনা

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:৩২

মহান আল্লাহ বান্দাহর প্রতি অসীম দয়াশীল। তিনি আমাদের এমন কিছু বরকতময় দিন ও রাত্রি দান করিয়াছেন যাহাতে ইবাদত-বন্দেগি করিলে গুনাহ-খাতা মাফের মাধ্যমে তাহার নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। এই সকলের মধ্যে শবেবরাত অন্যতম। ফারসি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ ভাগ্য। এই জন্য এই রাত্রিকে বলা হয় ভাগ্যরজনি। কেননা হজরত ইকরামার (রা.) এক ভাষ্য অনুযায়ী এই রাত্রে আগামী এক বৎসরের রিজিক নির্ধারণ করা হয়। এই এক বৎসরে যাহারা জন্মগ্রহণ করিবেন ও মারা যাইবেন তাহাদের তালিকাও এই রাত্রে নির্দিষ্ট ফেরেশতাদের হাতে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে আরবি পরিভাষায় এই রাত্রিকে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত, যাহার অর্থ মুক্তি বা ক্ষমার রাত্রি। কেননা এই রাত্রে আল্লাহ অগণিত বান্দাহকে ক্ষমা করিয়া দেন। তবে হাদিস শরিফে এই রাত্রিকে পরিচয় করিয়া দেওয়া হইয়াছে নিসফু মিন শাবান তথা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত্রি হিসাবে। যে নামেই অভিহিত করা হউক না কেন, এই রাত্রির মহিমা ও মর্যাদা যে অপরিসীম তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই।

এই রাত্রি সম্পর্কে সরাসরি কোরআন শরিফে কিছু বলা না হইলেও একাধিক হাদিস শরিফে এই রাত্রির ফজিলত ও গুরুত্বের কথা বর্ণিত হইয়াছে। বিশেষ করিয়া ইবনে মাজার ১৩৮৮ হইতে ১৩৯০ নম্বর হাদিসে যাহা বলা হইয়াছে তাহার মর্মার্থ হইল—যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত্রি আসিবে, তখন আমাদের এই রাত্রে দাঁড়াইয়া নামাজ আদায় এবং দিনে রোজা পালন করিতে হইবে। এই রাত্রে আল্লাহ তায়ালা বনু কালবের যতগুলি ছাগল রহিয়াছে, তাহাদের পশমের চাইতে বেশিসংখ্যক বান্দাহকে তথা অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করিয়া দেন। তবে কিছু ব্যক্তি রহিয়াছে যাহারা এতত্সত্ত্বেও ক্ষমা হইতে বঞ্চিত হয়। তাহারা হইল—মুশরিক, হিংসুক, জাদুকর, ব্যভিচারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান ও অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকারী। মূলত শবেবরাতের মধ্য দিয়াই শুরু হয় রমজান মাসের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি। তাই এই রাত্রি মুসলিম জাহানে এক পবিত্র আবেগ-অনুভূতি লইয়া উপস্থিত হয়।

শবেবরাত উপলক্ষ্যে আমাদের করণীয় হইল—এই রাত্রে আমরা সাধ্যমতো নফল নামাজ আদায় করিব। শবেবরাতের আগে বা পরে মিলাইয়া আমরা অন্তত দুইটি রোজা পালন করিব। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করিব। জিকির-আজকার, দোয়া-মাগফিরাত, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদিতে মশগুল থাকিব। বেশি বেশি করিয়া দান-সাদকা করিব। মা আয়েশা (রা.) হইতে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হইয়াছে যে, এই রাত্রে মহানবি (স.) জান্নাতুল বাকিতে গিয়া দুই হাত তুলিয়া দোয়া করিয়াছেন। তাই আমরাও এই রাত্রিতে কবর জিয়ারতের প্রতি গুরুত্বারোপ করিব। তবে এই রাত্রি উপলক্ষ্যে কোনো গর্হিত কিংবা শিরক-বিদআতি কোনো কাজ করিব না। যেমন— আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, আলোকসজ্জা করা, ক্ষমার অযোগ্য পাপ করা ইত্যাদি। 

বর্তমানে আমরা একটি সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়া দিন অতিবাহিত করিতেছি। কোভিড-১৯-এর কুফল দুই বৎসর ধরিয়া ভোগ করিবার পর আমরা আশা করিয়াছিলাম শীঘ্রই বিশ্ববাসী রোগ-জ্বরা ও দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি হইতে পরিত্রাণ লাভ করিবে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ আবার বিপদে পড়িয়াছে। বিশেষত, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলি মূল্যস্ফীতিসহ নানা চাপের সম্মুখীন। এই অবস্থায় এই রাত উপলক্ষ্যে গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি আমাদের যেমন সহানুভূতি থাকা প্রয়োজন, তেমনি আমরা এই যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অর্থনৈতিক চাপ হইতে মুক্তি এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্বমানবতার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট কায়মনোবাক্যে ফরিয়াদ জানাইব। সকলের প্রতি আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত বর্ষিত হউক। এই রাত্রের কল্যাণে অবসান হউক সকল সংকটের। আগামী দিনগুলি হইয়া উঠুক আরো সুন্দর, সমৃদ্ধ ও মঙ্গলময়—ইহাই হউক শবেবরাতের রাত্রির সম্মিলিত প্রার্থনা। পবিত্র এই রজনি উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাই মুবারকবাদ ও শুভেচ্ছা।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন