বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কুবি ছাত্রলীগের ৩ নেতাকে মারধর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৩, ২১:১৮

স্থানীয় ছাত্রদল নেতা ও বহিরাগতদের দিয়ে ছাত্রলীগের ৩ নেতাকে বেধড়ক মারধর করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আল আমিন কনফেকশনারির সামনে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেতারা হলেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী হৃদয় ও বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইদুল ইসলাম রোহান। 

মারধরকারীরা হলেন, খালেদ সাইফুল্লাহ (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব চন্দ্র দাস, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা রনি মজুমদার,  অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী কাওসার হোসেনসহ ১০-১৫ জন ছাত্রদল-ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। 

এদিকে মারধরের ঘটনার বিচারের দাবিতে বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় গেইট সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এসময় তারা 'আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই'; 'প্রক্টরের কালো হাত ভেঙে দাও'; এক দফা এক দাবি প্রক্টরের পদত্যাগ চাই'; 'সুষ্ঠু বিচার করিয়ে দে, না হয় গদি ছেড়ে দে' ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি জানান। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুরে ছাত্রলীগের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন, সাদ্দাম, সায়েমসহ কয়েকজন আল আমিনের দোকানে বসে নাস্তা করছিলেন। এমন সময়ে রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত ১০ থেকে ১৫  জন নেতাকর্মী তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে এনায়েত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান এবং সাইদুল ইসলাম রোহানের হাত ভেঙে যায়। পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি রাত ১০ টায় রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে উঠতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা প্রদান করেন। একপর্যায়ে এক সহকারী প্রক্টরের সাথে ছাত্রলীগ নেতাদের বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে গতকাল ৭ই মার্চ এনায়েত উল্লাহ এবং সালমান চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের পরদিনই এ মারধর পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার সাথে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী রানার যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি করে মারধরের পর তারা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে শুরুতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে অবস্থান নেন। 

বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধন হিসেবে মন্তব্য করে কাজী নজরুল ইসলাম হলের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, 'খুনি বিপ্লব ও ছাত্রদলের লোকজন কীভাবে একজন হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে মারধর করে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধনে তারা আজ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।'

ভুক্তভোগী সালমান চৌধুরী জানান, আমাকে বিপ্লব চন্দ্র দাস ডেকে নিয়ে যায় এবং প্রশাসন বহিষ্কার করলেও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছি জানতে চেয়ে আমাকে ও হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহকে মারধর শুরু করেন।

তবে মারধরের বিষয়ে হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কল কেটে দেন।

কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক এস এম আতিকউল্লাহ বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমি উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলেছি। বহিরাগতরা যেহেতু আক্রমণ করেছে তাই আমরা তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করব।'

প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'এসব বিষয়ে আমার কোন ইন্ধন নেই। যারা এমনটি বলছে তারা এটিকে প্রমাণ করতে হবে।' এ ঘটনায় প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি, এটা তাদের বিষয়।'

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর সামনে খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি এবং মারধরকারী বিপ্লব চন্দ্র দাস শতাধিক বহিরাগত নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে অস্ত্রের মহড়া দেয় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় তারা।

ইত্তেফাক/এআই/পিও