রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার নর্থসাউথ রোডে কুইন স্যানিটারি মার্কেটের আনিকা এজেন্সিস নামে এক স্যানেটারি দোকানে মঙ্গলবার (৭ মার্চ) ভয়াবহ বিস্ফোরণের আগে ডিউটিতে ছিলেন ৬ জন। এই ঘটনায় মালিকসহ ৫ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন দোকান মালিক সুমন, কর্মচারী সম্রাট, নাজমুল, শান্ত ও ইসমাইল। আর জীবিত উদ্ধার হওয়া কর্মচারী রাজিব ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে কুইন স্যানিটারি মার্কেটের সামনের রোড ডিভাইডারে মর্মাহত অবস্থায় ইত্তেফাক অনলাইনকে এ কথা বলেন ৫৫ বছর বয়সী আনিকা এজেন্সিস কর্মচারী কামাল হোসেন।
কামাল হোসেন বলেন, আমাদের আনিকা এজেন্সিসের মোট কর্মচারী ১৪ জন। কেউ ছুটিতে, কেউ অন্য কাজে মার্কেটের বাহিরে ছিল। মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণ আগে ডিউটিতে উপস্থিত ছিলেন ৬ জন। আমি দোকানের কালেকশনে বাহিরে অন্য গলিতে অবস্থান করছিলাম। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে আশেপাশে কেঁপে উঠে। দৌড়ে এসে দেখি কুইন স্যানিটারি মার্কেট লাগোয়া অন্য মার্কেট ও রাস্তার বিভিন্ন যানবাহন লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দোকানের ৪ জন কর্মচারীর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। আহত অবস্থায় একজন কর্মচারীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আজ আনিকা এজেন্সিসের মালিক সুমন ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের সবার লাশ তাদের পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতরা তাদের পরিবারে উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন। আজ আমিসহ আমাদের দোকানের সবাই কেউ বাবা, কেউ ভাই, কেউ স্বজন হারা হয়ে গেল। কেউ বন্ধু হারা হয়ে গেছে। সব পরিবার একপ্রকার নিঃস হয়ে গেছে।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা, আরেকটি পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেসমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়েছে। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলা বিধ্বস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৮ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (৮ মার্চ) দ্বিতীয় দিনের মতো চলমান অভিযানে ভবন থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। আজ সাড়ে ৪টার দিকে ভবন থেকে প্রথম লাশটি বের করা হয়। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে আরও একটি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ভবনটি পরিদর্শন করে বলেছে, ভবনের বেসমেন্টে বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে।
ভবনের ধ্বংসস্তূপ, আহত-নিহতের ধরন দেখে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলটি মনে করছে, ভবনের বেসমেন্টের বদ্ধ কোনো কক্ষে গ্যাস জমে সেটি ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছিল। সেখানে যেকোনো উপায়ে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভবনের বেসমেন্ট এবং নিচতলা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই যথেষ্ট প্রিপারেশন (প্রস্তুতি) নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম করা হয়েছে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিস্ফোরণের মূল কারণ জানা যাবে। ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করেছে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড। উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছে পুলিশ, আর্মি ও রাজউকের বিশেষজ্ঞরা।