শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কারণ দর্শানোর নোটিশ

বরিশাল মেডিক্যালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি

আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩, ০১:৩০

দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের একমাত্র বিশেষায়িত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রায়শই অনুপস্থিত থাকায় এর ফায়দা লুটছে অনেকেই। এ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু করে শীর্ষ পদ পর্যন্ত সবাই কাগজে কলমে চাকরিরত থাকলেও অধিকাংশই মূলত অর্থের বিনিময়ে সেবা দিয়ে থাকেন বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালের সামনে ও বরিশাল নগর জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকগুলোতে চলছে তাদের রমরমা ব্যবসা। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেডিক্যালমুখী করার জন্য বারবার শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের পরিচালক নির্দেশ দিলেও সেই অফিস আদেশ মানছেন না কেউই। আর সিনিয়র চিকিৎসকদের এ অবহেলার পুরো সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন নিম্নপদস্থরা। 

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

গত সপ্তাহে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ৯ বহির্বিভাগের চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন পরিচালক। কিন্তু বারবার অফিস আদেশ উপেক্ষা করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিক্যালমুখী না হওয়ায় মুমূর্ষু রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি না থাকায় ইন্টার্ন, নার্স থেকে শুরু করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণেই চলে সেবা কার্যক্রম। তারা যতক্ষণ মেডিক্যালে অবস্থান করেন ততক্ষণই রোগীদের বাইরের প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিকে নানা পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য প্রেরণ করে থাকেন। মেডিক্যালের ৩৭টি ওয়ার্ডে দৈনিক গড়ে ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা নিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। এসব ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যেক ওয়ার্ডে শিফট ভাগ করে দায়িত্বরতরা নিজেরাই নিয়মকানুন তৈরি করে রেখেছেন। রোগী ভর্তি থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত সব কার্যক্রম দেখভালে থাকা ট্রলিবয় থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে চলে বাণিজ্য। গতকাল ছুটির দিনে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা কেউ না থাকায় পুরো হাসপাতাল দখলে নিয়ে অসাধু কর্মচারীরা বাণিজ্য চালাচ্ছেন। নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত এক বৃদ্ধার নিকটাত্মীয় জানান, বুধবার সকাল ৯টায় তারা রোগী ভর্তি করলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক তারা পাননি। কয়েক জন এসে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ইন্টার্নরা ব্রেনের সিটি স্ক্যানসহ যে সব পরীক্ষানিরীক্ষা দিয়েছেন তার কোনোটাই মেডিক্যাল থেকে করানো সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকার পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকগণ তার অধীনে না থাকলেও মেডিক্যালে রুটিন করে রোগী দেখা তাদের দায়িত্ব এবং এ বিষয়টি তিনি বারবার তাদের জানিয়েছেন। এক বছর ধরে সকাল ৯টায় এবং সন্ধ্যায় সুবিধামতো সময়ে সব অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকগণকে হাসপাতালে এসে নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ঐ চিঠির পরও কেউ কর্ণপাত না করায় পরবর্তী সময় কলেজের অধ্যক্ষসহ তিনি যৌথ স্বাক্ষরে চিঠি দেন। কিন্তু তাতেও সুফল মিলছে না। তিনি বলেন, মুমূর্ষু রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সেবায় তাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়। আর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তো অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকদের কাছ থেকে চিকিৎসা বিষয়ে হাতেকলমে শিখবেন। তাই চিকিৎসকরা হাসপাতালমুখী না হলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৬৮ সালে ৩৬০ বেড নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তী সময় কাগজে কলমে ৫০০ থেকে ১ হাজার বেডে উন্নীত হলেও রোগী ভর্তি থাকে প্রায় ২ হাজার। হাজার বেড অনুযায়ী চিকিত্সকসহ বিভিন্ন পদে জনবল রয়েছে ছার ভাগের এক ভাগ মাত্র।

ইত্তেফাক/এমএএম