কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিপাকে পড়েছে রাজধানীর নামি প্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যে কোনো মুহূর্তে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যাবে। এ অবস্থায় বর্তমান এডহক গভর্নিং কমিটি ভেঙে দিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক বা বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবকেরা। আর এমনটি ভাবছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডও।
তথ্য অনুযায়ী, অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ বিধিসম্মত না হওয়ায় এবং চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়। একই সঙ্গে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির এডহক গভর্নিং বডিকে নির্দেশও দেওয়া হয়।
এই চিঠির আলোকে জাকির হোসেন স্কুলে গিয়ে সভাপতিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু সভাপতি দায়িত্ব না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। একসময় দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে জাকির হোসেন গভর্নিং বডির একজন সদস্য ও সিনিয়র শিক্ষকদের উপস্থিতিতে দায়িত্ব বুঝে নেন। এর পরপরই তিনি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি নোটিশ জারি করেন।
এদিকে মাউশির নির্দেশ না মেনে পদ ধরে রাখেন ফরহাদ হোসেন। এ কারণেই বিপত্তি। জাকির হোসেন কোনো নোটিশ প্রদান করার একটু পরই অজ্ঞাত স্থান থেকে পালটা নোটিশ জারি করেন ফরহাদ হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, ফরহাদ হোসেনকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন গভর্নিং বডির সভাপতি।
কয়েক জন শিক্ষক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কিছু সন্ত্রাসী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনকে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। শিক্ষকেরা এর নেপথ্যে সভাপতিকে দায়ী করছেন।
শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, মাউশি থেকে প্রধান শিক্ষকের পদে জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও ফরহাদ হোসেন তার ফেসবুক থেকে ঘোষণা দেন, এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের কোনো পদ নেই। এছাড়া মাউশি ও বোর্ডের সব নির্দেশনা অমান্য করে আসছেন ফরহাদ হোসেন। এর আগে শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সরকারি তিনটি তদন্তে ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়।
প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের অভিযোগ, ৭ মার্চের পূর্বঘোষিত অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও সাবেক প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন অডিটরিয়ামের চাবি লুকিয়ে রাখেন। অডিটরিয়ামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মূল ক্যাম্পাসে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।
তবে জাকির হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিলেও গতকাল অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঁচ দিন স্কুল বন্ধের নোটিশ জারি করেন সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। এই নোটিশ বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন পৃথক নোটিশ জারি করেন। তিনি প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটির মধ্য থেকে এক দিনের ছুটির ( ৯ মার্চ) ঘোষণা দেন। ফলে ছুটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে স্কুলে।
তবে গতকাল এ বিষয়ে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, স্কুলের ছুটি দেওয়ার এখতিয়ার গভর্নিং বডির নেই। তিনি জানান, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জাকির হোসেনকে প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য গভর্নিং বডি সভাপতিকে চিঠি দিয়েছে। যদি গভর্নিং বডির সভাপতি এই দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেন, তবে কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।
আর মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদও একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি। তাই তিনি অধ্যক্ষ পদে থাকতে পারবেন না। জাকির হোসেনকে প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনাও আছে। গভর্নিং বডি এই মাউশির নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।