মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

জিঞ্জারব্রেড দিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের ভীতিকর চরিত্র

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৪

বাইরে ভয়ংকর রূপ, ভেতরটা মিষ্টি। এক সুইডিশ শিল্পী চলচ্চিত্রের ভীতিকর চরিত্রদের নিয়ে ভোজ্য শিল্পকর্ম তৈরি করে বিস্ময় জাগাচ্ছেন। সেগুলো স্থায়ী হয় না বলে মানুষ কদর করে বেশি। শিল্পী ক্যারোলিন এরিকসনের বৈঠকখানা হরর ও কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রের 'মনস্টার' বা দৈত্যে ভরা। 

তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই, সেগুলো সব জিঞ্জারব্রেড দিয়ে তৈরি। ক্যারোলিন বলেন, 'কাঠামো জিঞ্জারব্রেডের ওজন ধরে রাখতে পারবে কিনা, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। না পারলে ভেঙে মেঝের উপর পড়বে। তখন আমার সব কাজ হারিয়ে যাবে। সত্যি আশা করি, এমনটা ঘটবে না।'

দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অসলো ভিত্তিক এই সুইডিশ শিল্পী মার্কিন অতিপ্রাকৃত 'স্ট্রেঞ্জার থিংস' সিরিজের মনস্টার 'ডেমোগর্গন' নিয়ে কাজ করছেন। জিঞ্জারবেডের উচ্চতা এক মিটার বিশ সেন্টিমিটার, ওজন প্রায় ১৫ কিলো।

স্টার ওয়ার্সের ডার্থ ভেডার, এলিয়েন চলচ্চিত্রের জেনোমর্ফ, গার্ডিয়ান্স অফ দ্য গ্যালাক্সির গ্রুট ও স্পাইডারম্যানের চরিত্র ভিনোমের মতো জিঞ্জারব্রেডের সৃষ্টিও শোভা পাচ্ছে। 

স্পাইডারম্যানের চরিত্র ভিনোম

এমন উদ্ভট শখ সম্পর্কে ক্যারোলিন বলেন, 'আমি চলচ্চিত্র পাগল ও সায়েন্স ফিকশন অনুরাগী। পপ কালচারের সব কিছুই আমার পছন্দ৷ সে কারণেই হয়তো এমন সব চরিত্র বেছে নেই। তাছাড়া ভয়ংকর ও রহস্যজনক কোনো কিছু তৈরির একটা আলাদা রোমাঞ্চ রয়েছে। আমার সত্যি সেটা পছন্দ।'

প্রতিটি প্রকল্পই এক স্কেচের মাধ্যমে শুরু হয়। নিজের কাজের মূলমন্ত্র ব্যাখ্যা করে ক্যারোলিন এরিক্সসন বলেন, 'প্রক্রিয়ার শুরুতে কোন দিকে সব সময়ে মনোযোগ দিতে হয়, সেটা আমি শিখেছি। কারণ শুরুতে ভুল করলে পরেও কিছু না কিছু গোলমাল হবে। তাই আগেভাগেই সম্ভাব্য সমস্যা কল্পনা করে ঘটার আগেই সেই সমস্যা দূর করার চেষ্টা করি।'

প্রতিটি প্রকল্পই এক স্কেচের মাধ্যমে শুরু হয়।

মূর্তিগুলোকে স্থিতিশীল করতে তিনি তার দিয়ে এক কঙ্কাল তৈরি করে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে মুড়ে দেন। জাপানের 'স্পিরিটেড অ্যাওয়ে' নামের অ্যানিমে চলচ্চিত্রের ড্রাগন হাকু তার অন্যতম চলমান প্রকল্প। মূর্তির বাইরের অংশ সব সময়ে শুদ্ধ জিঞ্জারব্রেডের তাল দিয়ে তৈরি। 

সেটা কি শিল্প, নাকি বড়সড় এক বিস্কিট? ক্যারোলিন বলেন, 'আমার মনে কখনো এমন ভাস্কর্য খাবার ইচ্ছে জাগে নি। আমি যেহেতু কুকি নয়, আর্ট হিসেবে সেগুলো সৃষ্টি করি, কেউ সেই ভাস্কর্য খেলে আমার কষ্ট হবে বলে মনে হয়।'

এলিয়েন চলচ্চিত্রের জেনোমর্ফ

শুরুতে তিনি জিঞ্জারবেড দিয়ে বাড়িঘর বানিয়েছেন। তখন থেকেই তিনি একই উপকরণ দিয়ে জীবগুলো সৃষ্টির আইডিয়া পান। ক্যারোলিন এরিকসন বলেন, 'এটি জিঞ্জারবেড তৈরির সাধারণ প্রণালী। আমি একেবারে শুরু থেকে সেটা তৈরি করি। অতএব খাওয়া যায়৷ স্বাদ আসলেই খুব ভালো।'

ক্যারোলিন এরিকসনের সর্বশেষ কৌশল হলো এমন এক জিঞ্জারব্রেডের তাল তৈরি করা, পানি যোগ করার কারণে যেটি কাদামাটির মতো সহজে পছন্দমতো আকার দেওয়া যায়।

বাইরে ভয়ংকর হলেও ভেতরটা মিষ্টি। সে কারণেও ক্যারোলিন এরিকসনের শিল্পকর্ম দর্শকদের আরও মুগ্ধ করে।

তিনি ধীরে ধীরে কাঠামোর উপর সেই তাল বসিয়ে একাধিকবার শুকাতে দেন। সেই গঠন অক্ষত থাকে। অবশেষে তিনি ভোজ্য রং যোগ করে ভাস্কর্যটিকে আরও জীবন্ত করে তোলেন। তবে সেই শিল্পকর্ম মোটেই স্থায়ী হয় না। 

ক্যারোলিন এরিকসন বলেন, 'এমন সৃষ্টি অবশ্যই চিরকালের জন্য নয়। খাদ্য বলে কোনো না কোনো সময় ভেঙে পড়বেই। মনে হয় কয়েক মাস টিকবে। ভেঙে পড়ার আগে মন একটু খারাপ হলেও অন্যদিকে শিল্পকর্ম স্থায়ী না হবার একটা রোমাঞ্চও রয়েছে। তখন সেটির আরও কদর করা হয়।'

বাইরে ভয়ংকর হলেও ভেতরটা মিষ্টি। সে কারণেও ক্যারোলিন এরিকসনের শিল্পকর্ম দর্শকদের আরও মুগ্ধ করে।

ইত্তেফাক/ডিএস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন