শীত গত হয়ে চলছে বসন্ত কাল। পরিবেশ ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। এ সময়ও ঝাঁক বেঁধে পরিযায়ী পাখি উড়তে দেখা যাচ্ছে। তবে পাখির এ উড়া আর সব দিনের মতো নয়। পরিযায়ী পাখিরা শীত শেষে ফিরে যাচ্ছে নতুন ঠিকানায়। শেরপুর জেলা জুড়ে প্রতিদিনই দেখা মিলছে এমন চিত্র। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পরিযায়ী পাখির দল শীতপ্রধান ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল, রাশিয়ার সাইবেরিয়া, চিন, মঙ্গোলিয়া ও হিমালয়ের পাদদেশ থেকে এ জেলায় আসতে শুরু করে। চার-পাঁচ মাস ধরে পাখিরা এ অঞ্চলে অবস্থান করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যেই ফিরে যায়। তবে, জেলায় এবারই প্রথম মহাবিপন্ন ১৪টি হলদেবুক-চটক পাখির একটি দলের দেখা মিলেছে। যা সম্প্রতি ফিরে গেছে।
জানা যায়, শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের বনাঞ্চল ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামীণ ঝোপ, ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল, সদর উপজেলার ইসলিবিল, চাটাবিল, রৌহাবিল, কেউটাবিল, ঝিনাইগাতী উপজেলার বগাডুবি, গজারমারী, বাইল্যার বিল ও নকলা উপজেলার কুরশা বিলে শীতের পরিযায়ী পাখির আগমন বেশী ঘটে।
স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটি সূত্রে জানা গেছে, শীতে যেসব পাখি শেরপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির হাঁস, জিরিয়া, বাটান, চ্যাগা, মাছ মুরাল, বাজ, ঈগল, শিকরে, কাপাসি, শাহিন, সাহেলি, বেনেবউ, ফুটকি, চুটকি, দামা, ফিদ্দা, গির্দি, রবিন, শিলাফিদ্দা, ঝারফিদ্দা, খঞ্জন, তুলিকা, চটক ইত্যাদি। এছাড়াও বিরল পাখি হিসাবে চিহ্নিত যেসব পাখি দেখা গেছে সেগুলো হচ্ছে, বেইলন— গুরগুরি, বড়-চোখগ্যালো, পাকরা কাপাশি, কালাবাজ, ইউরেশিয়-চড়ুইশিকরে, পাতি-তিশাবাজ, পেরেগ্রিন-শাহিন, কালাঘাড়-বেনেবউ, সরুঠুঁটি-বেনেবউ, পালাসি-ফড়িংফুটকি, হলদেতলা-ফুটকি, হিউমনের-ফুটকি, দেশি নীলরবিন, আঁশটে-দামা, টিকেলের-দামা, খুদে-খাটোডানা, সাইবেরিয়-নীল রবিন, পাকরা-ঝাড়ফিদ্দা, ধলাভ্রু-চুটকি, ছোট নীলমনি, লালপেট-নীলমনি, ঘননীল-চুটকি, কালচেনীল-চুটকি, নীলচে- চুটকি, গাছতুলিকা, খুদে-চটক, কালামুখ-চটক, লালমাথা-চটক ইত্যাদি। এ বছর শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির পর্যবেক্ষণে দেড় শতাধিক শীতের পরিযায়ী পাখি দেখা মিলেছে।
এবারের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, সারা বিশ্বে মহা বিপন্নপাখি বলে চিহ্নিত ১৪টি হলদেবুক-চটক পাখির একটি ঝাঁক পুরো শীতকাল শেরপুর সদর উপজেলার রৌহাবিলে অবস্থান করেছে। সংবাদটি প্রচার হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু পাখি প্রেমিক বিরল এ পাখি দেখতে আসেন। সে দলে ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মনিরুল এইচ খানও। তিনি জানান, হোগলা বন সমৃদ্ধ জলাভূমিতে এসব পাখি থাকতে ভালোবাসে। এ জলাভূমি ও হোগলা বন যেন সম্প্রসারিত করা হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির সভাপতি সুজয় মালাকার ও সম্পাদক শহীদুজ্জামান জানান, নানা কারণে দেশীয় পাখির সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে পরিযায়ী পাখির আসা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল। তবে, পাখি রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় স্থানীয়সহ পরিযায়ী পাখিদের পূর্বের তুলনায় বেশি দেখা যাছে। এ প্রসঙ্গে জেলা বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার জানান, শীতকালে এ অঞ্চলে অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। ইতিমধ্যে তারা কয়েকটি এলাকা পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড দিয়েছেন। তবে মহাবিপন্ন হলদেবুক-চটক পাখির অবস্থান সম্পর্কে তাদের জানা নেই। সরেজমিনে অনুসন্ধান করে অচিরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।