বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

রাবিতে সংঘর্ষ

উপাচার্যকে ঘিরে রেখেছে শিক্ষার্থীরা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩, ১৪:২২

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ও পুলিশের হামলার বিচার দাবিতে রোববার (১২ মার্চ) সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনরতদের সাথে কথা বলতে এসে তোপের মুখে পড়েন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে উপাচার্য সিনেট ভবনের পাশে অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীরা সেখান ঘিরে রাখে তাকে। এ সময় সেখানে শিক্ষার্থীদের হাতে সাংবাদিকরা মারধরের শিকার হয়েছেন।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার (১২ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মিলে প্রশাসন ভবনে তালা দেন। পরে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। তারা এর বিচার দাবি করছেন। 

পরে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার, সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ও হুমায়ুন কবীরসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পাশে অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীরা সেখান তাঁদের ঘিরে রাখেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকে বলা হয়, ‘কোনো ঘটনার বিচার আলোচনা করা ছাড়া সম্ভব নয়।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা ২টা) সেখানে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন উপাচার্যসহ অন্যরা।

এদিকে আন্দোলন চলাকালীন কয়েকজন সাংবাদিকের ওপরে হামলা চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় চ্যানেল-২৪ এর রিপোর্টার আবরার ও অফিস সহকারী জুয়েল আহত হয়েছেন। পরে তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া কালের কণ্ঠের রাজশাহীর ফটোসাংবাদিক সালাউদ্দিনের ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে তারা।

কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েক দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী স্থানীয় ও পুলিশ সদস্যদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করা, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

এদিকে যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে বিপুল সংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে বাড়ানো হয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতাও। অন্যদিকে গত রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনাস্থল বিনোদপুরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এর মধ্যেই আজ রোববার (১২ মার্চ) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুড়ে যাওয়া দোকানের পাশে হতাশ হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া সংঘর্ষের পর থেকে নগরীর তালাইমারী থেকে চৌদ্দপাই পর্যন্ত রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাইসাইকেল ও রিকশা সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। 

গতকাল শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে এলাকাবাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলার একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৮৬ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে রাকিব নামের একজন শিক্ষার্থী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুকুল হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬ জন। চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক। আহতদের মধ্যে এলাকাবাসীও রয়েছেন।

এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৭ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়। অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পরই রাতের মধ্যেই বিজিবি সদস্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে এখনো বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।   

স্থানীয়রা জানান, শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভাড়া কম দেয়া ও সিটে বসা নিয়ে বিনোদপুর গেটের কাছে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসের চালক ও হেলপারকে পেটান শিক্ষার্থীরা। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চালক ও হেলপারকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলমান সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় সংঘর্ষে বেশ কিছু মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া বিনোদপুর গেটের পুলিশ ক্যাম্পেও আগুন দেওয়া হয়। তবে কারা এই ভাঙচুর আগুন দিয়েছে তা নিশ্চিত করা হয়নি। সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানীয় অধিবাসী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।

সংঘর্ষে ১৫০ থেকে ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন বলে গত রাতে সাংবাদিকদের জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম। তিনি আরও জানান, আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক জানান, 'শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের সময় বিনোদপুর বাজারে কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারেননি প্রক্টর।’

ইত্তেফাক/আর