এই তো গত বছরের ১৩ নভেম্বর শেষ বারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলতে নেমেছিল ইংল্যান্ড দল। সেই ম্যাচে তারা পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে হয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এরপর আর কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে খেলতে নামেনি বাটলাররা। ক্ষুদ্র ফরম্যাটে বিশ্বসেরা হওয়ার পর বাংলাদেশের বিপক্ষেই প্রথম এ ফরম্যাটে খেলতে নামে তারা। আর তাতেই হয়ে গেল ওলটপালট! এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয় ইংলিশদের। এদিকে বাংলাদেশ গড়ল নতুন ইতিহাস। প্রথম বারের মতো কোনো ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেন টাইগাররা। আর এ সিরিজ জয়ে নায়কের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন দলের বাঁহাতি ব্যাটার নাজমুল হাসান শান্ত। দুই ম্যাচেই তিনি ব্যাট হাতে প্রমাণ করেছেন নিজের যোগ্যতা। এছাড়া চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে না খেললেও মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে টাইগারদের জয় পেতে বড় ভূমিকা রাখেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এছাড়া ইংল্যান্ডের মতো বাংলাদেশও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর প্রথম এ ক্ষুদ্র ফরম্যাটে খেলতে নামে এ সিরিজে। তবে বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে এই দলের রয়েছে অনেক তফাৎ। সাকিব আল হাসানের দলে এসেছে পরিবর্তন, দলে যুক্ত হয়েছে নতুন কয়েক মুখ। আর তাতেই যেন নতুন করে গর্জন করতে শুরু করেছেন টাইগাররা।
এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের নাম শুনলেই সবার আগে মাথায় আসে ওয়ানডে ফরম্যাটের কথা। কারণ নিজেদের ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে যেন এবার আত্মসমর্পণই করে বসেন টাইগাররা। তাতে করে ২-১ ব্যবধানে ৭ বছর পর ঘরের মাটিতে সিরিজ হারের স্বাদ নেন। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজ হারলেও ঘুরে দাঁড়ায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে, শুধু তা-ই নয়, গড়ে ফেলেন নতুন এক ইতিহাসও। গতকাল সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৭ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেটে জয় পায় সাকিব বাহিনী। এদিন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সাকিব-মিরাজরা নতুন ইতিহাস গড়ার হাতছানিকে সামনে রেখেই মাঠে নেমেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। কেননা টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে কেবল ইংল্যান্ডই বাদে সব দলের বিপক্ষে কোনো না কোনো সংস্করণে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ছিল না কোনো সিরিজ জয়। সেটাও গতকাল পূর্ণ করলেন টাইগাররা।
এদিকে ম্যাচটি মাঠে গড়ায় বেলা ৩ টার দিকে। তবে টাইগারদের নতুন এ ইতিহাস গড়ার দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ভুল করেনি ক্রিকেট ভক্তরা। গ্যালারি ছিল দর্শকে ঠাসা। তাই স্টেডিয়ামে নজর বুলিয়ে কোনোমতেই বোঝার উপায় ছিল না যে গতকাল ছিল সাপ্তাহিক কর্মদিবসের প্রথম দিন। তবে দর্শকদের হতাশ হতে হয়নি পয়সা উসুল, ম্যাচ দেখেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ফিরেছেন বাড়ি।
তবে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়া সিরিজের প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে দলকে জেতালেও গতকাল মিরপুরের জয়ে রাখতে পারেননি বড় কোনো ভূমিকা। কিন্তু এ দিন অলরাউন্ডার হয়ে জ্বলে উঠেছিলেন প্রথম ম্যাচে না খেলা মেহেদি হাসান মিরাজ। চট্টগ্রামে ভিন্ন কন্ডিশন হওয়ায় টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পেয়েছিল শামিম পাটোয়ারী। তবে মিরপুরে আসতেই দলে শামিমের জায়গায় দলে যুক্ত হয়ে যান মিরাজ।
এ ম্যাচে চট্টগ্রামের মতোই টস ভাগ্যে জিতে যান সাকিব আল হাসান। প্রথম ম্যাচের মত এ ম্যাচেও তিনি সিদ্ধান্ত নেন আগে বল করার। এইটুকু পর্যন্ত চট্টগ্রামের সঙ্গে মিল থাকলেও ম্যাচের বাকি অংশ ছিল ভিন্ন। কেননা এদিন ইংলিশ ওপেনিংয়ে আনা হয় পরিবর্তন। প্রথম ম্যাচে ফিল সল্টের সঙ্গে ইংলিশ অধিনায়ক বাটলার নামলেও এদিন তার সঙ্গে নামেন ডেভিড মালান। তবে এ পরিবর্তনও ঠেকাতে পারেনি ইংলিশদের হার। এদিন পার্ট টাইম-ফুলটাইম সবাইকেই বল হাতে সুযোগ দিয়েছেন সাকিব। কেবল উইকেটরক্ষক লিটন দাস, দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা তৌহিদ হৃদয় এবং ওপেনার রনি তালুকদার ছাড়া প্রায় ৮ জনই করেছেন বল। আর এতে নির্ধারিত ওভারে ১১৬ রান তুলতে গিয়েই অলআউট হয়ে যান ইংলিশরা। তবে উইকেট পেয়েছেন মিরাজ ৪টি, তাসকিন ১টি, সাকিব ১টি, হাসান মাহমুদ ১টি এবং মোস্তাফিজুর রহমান ১টি করে। এছাড়া ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশ এদিন পায় সহজ লক্ষ্য। তবে এ সহজ লক্ষ্যই তাড়া করে জিততে টাইগারদের হারাতে হয় ৬ উইকেট। এতে করে সহজ ম্যাচকে কঠিন করে শেষ অবদি শান্ত ও তাসকিন ইতিহাস গড়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে মাঠ ছাড়েন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড: ১১৭/১০ (২০ ওভার)। বাংলাদেশ: ১২০/৬ (১৮.৫ ওভার)। ম্যাচ-সেরা: মেহেদী হাসান মিরাজ