মেহেদী হাসান মিরাজ...দিনদিন নামটি যেন টাইগারদের আশার প্রতীক হয়ে উঠছে। গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার দিনেও আলোকিত হয়ে ছিল এ অলরাউন্ডারের নাম। চট্টগ্রামের অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচে দলে না থাকলেও, মিরপুরের ম্যাচে তাকে রাখা হয় দলে। আর সুযোগ পেয়েই বল হাতে ইংলিশ উইকেটে দেখান তার ভেলকি। করেন ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। তুলে নেন চারটি উইকেটও। ব্যাট হাতেও ছিলেন সক্রিয়। বাংলাদেশের ইনিংসে একমাত্র তিনি হাঁকিয়েছেন দুটি ছয়। তার এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান মিরাজ।
এছাড়া ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও আসেন মিরাজ। ম্যাচ-সেরা হওয়া এই ক্রিকেটার সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, দ্বিধা ছিল তার। সবাই তো অবাক। এত ভালো পারফর্ম করে তার কিসের দ্বিধা আবার! তবে তিনি মুখ খুলতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই প্রথম জাতীয় দলের হয়ে ক্ষুদ্র ফরম্যাটে খেলতে নেমেছেন মিরাজ। তাই অনেক দিন খেলতে নেমে মানিয়ে নেওয়ার দ্বিধায় ছিলেন তিনি। বলেন, ‘ভালো লাগছে যে দলের জন্য কিছু করতে পেরেছি। অনেক দিন পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছি। আমি কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম (ভালো করতে পারব কি না)। তবে দলের সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছে।’ এ সময় ইতিহাস গড়া এ জয়কে বাংলাদেশের জয় উল্লেখ করে মিরাজ বলেন, ‘আপনি একটা জিনিস দেখেন, প্রতিটা সিরিজই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ ভাবে আন্তর্জাতিক। অবশ্যই প্রতিটা দেশের সঙ্গে জিতলে অনেক ভালো লাগে। নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না অমুককে হারালে, নিউজিল্যান্ডকে হারালে, অস্ট্রেলিয়াকে হারালে ভালো লাগবে...অবশ্যই প্রতিটা দলকে হারালেই আমাদের ফিলিংস একই রকম থাকে। কারণ দিনশেষে, জিতছে কে? বাংলাদেশ। আমরা সবাই জিতেছি, এটা কিন্তু একটা আনন্দের বিষয়। আজকে দেখেন সবাই কিন্তু অনেক খুশি। আপনারা যারা আছেন খুশি, আমরা খুশি, ম্যানেজম্যান্ট খুশি, সারা বাংলাদেশের মানুষ; সবাই খুশি। কারণ আমরা বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছি। আমরা যদি জিতি, বাংলাদেশই জেতে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জিতলে বাংলাদেশ জিতে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জিতলেও বাংলাদেশ জেতে। অবশ্যই বড় দলের সঙ্গে হলে অবশ্যই আরো ভালো লাগে।’
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুই ম্যাচ জিতে ১ বাকি থাকতে ইতিমধ্যে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছেন টাইগাররা। যা কিনা কোনো ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম পাওয়া সিরিজ জয়। তবে এখনো এক ম্যাচ বাকি বাংলাদেশ কি পারবে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন উঠতেই মিরাজ বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। আপনি দেখেন আমরা কিন্তু অবশ্যই জেতার জন্য নামি। কিন্তু জেতার আগে কিছু প্রক্রিয়া আছে, সেটা অনুসরণ করতে হয় আমাদের। আমরা যদি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যাই তাহলে কখনো জিততে পারব না। আমরা যেভাবে চলছি, রুটিন আছে; আমরা ঐভাবেই চেষ্টা করব। তারপর খেলা শেষে রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করব। আমরা কখনো আগে থেকে ফল নিয়ে চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি কীভাবে আমরা খেলব, কীভাবে প্ল্যানিং করব, কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলা যায়। রেজাল্ট আসবে দিন শেষে।’
এর আগে ম্যাচ শেষে ম্যাচ-সেরা হওয়ার পুরস্কার নিতে গিয়ে মিরাজ বলেছিলেন, ‘আমি খুবই খুশি। অনেক দিন পরে জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেললাম, সেজন্য নিজের দায়িত্ব নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলাম। কিন্তু আমার অধিনায়ক এবং টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। বল হাতে কেবল ভালো জায়গায় বোলিং করার চেষ্টা করেছি। ব্যাট হাতে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে চেয়েছি। খারাপ বল পেলে মারতে চেয়েছি।’ এদিকে গতকাল মিরাজ নিজের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ ম্যাচে মাঠে নামার আগে তিনি ১৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন মাত্র ৮ উইকেট। তবে মিরপুরে তিনি এক ম্যাচেই তুলে নেন ৪ উইকেট যা কি না, তার ক্যারিয়ারে এই প্রথম। এছাড়া এতদিন তার ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং ফিগার ছিল ১৭ রানে ৩ উইকেট। যা কি না রবিবার টপকে ১২ রানে ৪ উইকেটে গিয়ে দাঁড়ায়।