ফরিদপুরে বিভিন্ন ইউনিয়নে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংঘর্ষের ঘটনা।
সদর উপজেলার ১১ ইউনিয়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ও সমর্থকদের কুপিয়ে আহত করা, নির্বাচনী বহরে হামলা, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর এবং এজেন্টকে বাড়িতে হুমকি ধমকি দেওয়ার মতো বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার উপজেলার কানাইপুর, কৈজুরি, ডিক্রিরচর, মাচ্চরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
কানাইপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে বেশ কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে শহর থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। কানাইপুর এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজনকে আমার নৌকা মার্কার পোস্টার ছিড়তে দেখলে বাধা দেই। এতে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা হামলা করে। এতে আমার ভাই চঞ্চল ইসলাম ও সুমনকে জখম করে।
তিনি আরও বলেন, আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সবাই এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বরাবরও অভিযোগ দিব।
কৈজুরী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাম্বূলখানা এলাকায় প্রচারণা শেষে ঘোড়াদহ এলাকায় যাওয়ার পথে বেতবাড়িয়া এলাকায় মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা নিয়ে পৌঁছালে শ্রমিক লীগের আহবায়ক সেলিমুজ্জামানের নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালায়। এ সময় তারা দু’টি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এতে তার অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হন।
কোতোয়ালী থানা শ্রমিক লীগের আহবায়ক সেলিমুজ্জামান বলেন, নাজিম উদ্দিন যে অভিযোগ করেছে এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
এদিকে সোমবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিক্রিরচর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাসানের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তার অভিযোগ আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ও তার সমর্থকরা এ হামলা করেছে।
মেহেদী হাসান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের সমর্থকরা তার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার সমর্থকদের ধাওয়া করেছে।
মাচ্চর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ মুন্সী অভিযোগ করেন, মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরিহিত নৌকার সমর্থকরা তার সমর্থকদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। সোমবার রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
অম্বিকাপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.নূরুল আলম অভিযোগ করেন, তার কর্মী ও এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা।
ফরিদপুর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বেশকিছু অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ তদন্তের জন্য কোতোয়ালী থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, প্রতিটি অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। যেসব অভিযোগ এসেছে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশের নতুন চারটি টহল দল গঠন করা হয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ফরিদপুর সদরের ১১টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইভিএম পদ্ধতিতে এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে।