বাঙালির ইতিহাসে যে অগ্নিঝরা ৭ই মার্চে রাজনীতির কবি দৃপ্ত পায়ে মঞ্চে উঠে বজ্রকন্ঠে সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে তর্জনী উঁচিয়ে শুনিয়েছিলেন তার অমর কবিতাখানি, দিয়েছিলেন স্বাধিকার চেতনা ও বাঙালি জাতির মুক্তির দিকনির্দেশনা, সেই ৭ই মার্চ বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীদের ভাষাগত জটিলতা দূর করার জন্য চালু হয়েছে ‘তর্জনী’ ব্রাউজার। ব্রাউজারটিতে বাংলার পাশাপাশি রয়েছে ইংরেজি ভাষাও। চালু করেছে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) এস্টাবিলিশমেন্ট অব সিকিউরড ইমেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটেরেসি সেন্টার।
ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা অর্জন করেছি আগেই। ইতিমধ্যে জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে গেছে ডিজিটাল সেবা। এখন আমাদের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণে ‘তর্জনী’ ব্রাউজার উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে একটি সুন্দরতম নতুন প্ল্যাটফরম হতে চলেছে।
প্রথমত, ব্রাউজার কী বা কেন—এটা প্রয়োজন তার একটা ধারণা সাধারণ পাঠকের জানা প্রয়োজন। ব্রাউজার হলো সেসব সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন (সংক্ষেপে অ্যাপ) যার মাধ্যমে ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটে বা ঠিকানায় ভিজিট বা পরিভ্রমণ করা যায়। এরূপ অনেক ব্রাউজার রয়েছে। জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি হলো—গুগল ক্রোম, মজিলা ফায়ার ফক্স, মাইক্রোসফট এজ, সাফারি, অপেরা, ডাক-ডাক-গো ইত্যাদি। তেমনি ‘তর্জনী’ হলো আমাদের নিজস্ব একটি ব্রাউজার! অ্যাপল ও গুগল প্লে-স্টোর থেকে যে কেউ ‘তর্জনী’ ব্রাউজারটি তার স্মার্টফোনে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
মোটাদাগে যেসব সুবিধা আছে তা হলো ব্রাউজারটির মোবাইল সংস্করণের হোমপেজে বুকমার্ক, নতুন ট্যাব, ইনকগনিটো, ডার্ক মোড, ফন্ট সাইজ এবং শেয়ার ফিচার।
এছাড়াও জনগণের পক্ষে সহজে ডিজিটাল সেবা পেতে উল্লেখযোগ্য কিছু ওয়েবসাইটের নাম ও লোগো সংবলিত বাংলা আইকন। এতে করে বড় যে সুবিধাটি পাওয়া যাবে তা হলো :ওয়েবসাইটের লিংক মনেও রাখতে হবে না আবার ভুলের সম্ভাবনাও থাকবে না; স্বল্প শিক্ষিত থেকে শুরু করে অদক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানের সেবা পেতে শুধু প্রতিষ্ঠানের বাংলা নাম পড়ে ও সেটির আইকনে ক্লিক করে প্রবেশ করতে পারবেন কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটে। এখানে বলে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশের সরকারি প্রায় সব ওয়েবসাইটেই বাংলা ভার্শন ও ইংরেজি ভার্শন চালু রয়েছে।
তর্জনীতে বাংলা ও ইংরেজিতে ব্রাউজিংয়ের পাশাপাশি কোনো ওয়েবসাইটগুলোর লোগো সংযুক্ত নাম ও লিংক দেওয়া আছে সকলকে নিয়ে একটি স্মার্ট জাতি গঠনের জন্য। পিএমও (প্রাইম মিনিস্টার’স অফিস), সংসদ (বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ) এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড), জিআরএস (অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা), মন্ত্রিপরিষদ, আইসিটি (আইসিটি ডিভিশন), ডিএসএ (ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি), বিসিসি (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল), ডিজিটাল (ডিজিটাল বাংলাদেশ), ইপাসপোর্ট, জনতার সরকার, ডিএলসি (ডিজিটাল লিটেরেসি সেন্টার), তথ্য (বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন), মাইগভ (এক ঠিকানায় সব সরকারি সেবা), এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা), জন্মনিবন্ধন, সুরক্ষা (করোনা টিকা নিবন্ধন), ইউনিসেফ (জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক প্রতিষ্ঠান), একশপ (যে কোনো পণ্য ক্রয়ের সরকারি ওয়েবসাইট) ও মেডিকো (বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা)।
এর পরই রয়েছে সাম্প্রতিক তথ্যের স্ক্রল চিত্রসহ লিংক আর দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য পত্রপত্রিকা ও নিউজ চ্যানেলের প্রতি মুহূর্তের আপডেট এবং তাদের লিংকসমূহ। এ তালিকায় রয়েছে বিবিসি, আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও বার্তা২৪-এর মতো নিউজ চ্যানেল ও পোর্টাল। আছে বিনোদন, ফিচার ও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ লিংক; যেমন, মন্ত্রণালয়, সরকারি হাসপাতাল, ব্যাংক, হোটেল, সংবাদপত্র, এয়ারলাইনস-এর ঠিকানা ও লিংকসমূহ, যাদের তথ্য ও সেবা পেতে একটা ক্লিকেই প্রবেশ করা যাবে নিজ নিজ ঠিকানায়। আর এসব ফিচারের এক জায়গায় দেখা মিলবে তর্জনী অ্যাপে প্রবেশ।
আইকন যুক্ত সেবা প্রতিষ্ঠানের নাতিদীর্ঘ এই তালিকায় ‘বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ’ যুক্ত করার প্রয়োজন ছিল। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ছিল ‘মুক্তপাঠ’ এবং ‘শিক্ষা বোর্ডসমূহ’ নামে আইকনযুক্ত লিংক ও ফলাফল লিংক। থাকতে পারত সকল সরকারি চাকরির আবেদনের টেলিটক আবেদন লিংক। এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে ও কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মফস্সল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের হতাশা ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সবকিছু যখন এক প্ল্যাটফরমে আসছে তখন আগামী দিনের স্মার্ট নাগরিক, উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের কান্ডারি তথা আজকের দিনের শিক্ষার্থীদেরকে সহজে প্রযুক্তিগত সেবার সংস্পর্শে আনতে উপরিউক্ত সুবিধাসমূহ সংযোজনের অপরিহার্যতা অনুভব করছি। সেই সঙ্গে আশা রাখছি অচিরেই এসব সেবার লিংক ‘তর্জনী’তে যুক্ত হবে।
লেখক :প্রযুক্তিবিদ