প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করার পর একটাই স্বপ্ন ছিল দেশবাসীর। টানা দুটি দিন আশান্বিত হৃদয়ে লালন করা দেশবাসীর সেই রঙিন স্বপ্নটা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়েছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের বাংলাওয়াশ করেই ছেড়েছে সাকিব আল হাসানের দল। গতকাল মিরপুরে ইংলিশদের বাংলাওয়াশ করা ১৬ রানের জয়ের বড় নায়ক নিশ্চিতভাবেই ওপেনার লিটন দাস। ম্যাচ-সেরার পুরস্কার প্রাপ্তি তারই বড় প্রমাণ। কাল দলকে ১৫৮/২ রানের পুঁজি এনে দিতে লিটন দাস খেলেছেন ৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস।
মজার বিষয় হলো, ক্যারিয়ার-সেরা এই ইনিংসটা লিটন দাস খেলেছেন নিজের ‘রূপ বদলে’ উলটো পথে! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে লিটন দাসের উপস্থিতি মানেই ধুম ধারাক্কা ব্যাটিং। কাল সেই লিটন দাস খেললেন দেখেশুনে, ধীরেসুস্থে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে লিটন দাসের আগের হাফ সেঞ্চুরি ইনিংসগুলো বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটা তার নবম হাফ সেঞ্চুরি। এই ৯ হাফ সেঞ্চুরি ইনিংসের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির ইনিংসটি গতকালেরটিই। এমনকি হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করাতেও সবচেয়ে বেশি বল খরচ করেছেন গতকাল। ৪১ বলে ৫০-এ পা রাখেন, শেষ পর্যন্ত খেলেছেন ৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। এর আগে যে ৮টি হাফ সেঞ্চুরি করেন, সেই ইনিংসগুলোতে ৫০ স্পর্শ করেন যথাক্রমে ২১, ২৪, ২৬, ৩০, ৩১, ৩১, ৩৪ ও ৩৫ বলে!
শুধু ৫০ স্পর্শ করায় নয়, হাফ সেঞ্চুরি ইনিংসগুলোর মধ্যে স্ট্রাইক রেটেও গতকালের ইনিংসটিই ছিল সবচেয়ে পিছিয়ে। কাল তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১২৮.০৭। এর আগের হাফ সেঞ্চুরি ইনিংসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৩.৩৩। ২০২০ সালের ১১ মার্চ এই মিরপুরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৪৫ বলে অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস। কালকের আগে ৫০ ছুঁতে সবচেয়ে বেশি ৩৫ বল লাগিয়েছিলেন সেই ম্যাচেই। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টই বলে দিচ্ছে, ব্যাট হাতে গতকাল নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন লিটন দাস। অতি আক্রমণাত্মক মানসিকতাকে নিজের ভেতরেই কবরচাপা দিয়ে বেছে নেন দায়িত্বশীলতার পথ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লিটন দাস কেন নিজেকে এভাবে বদলেছিলেন কাল? কারণ, ব্যাট হাতে সাময়িক দুঃসময়ের ভূতকে পরাজিত করে ফিসফিসানি বন্ধ করা। পাশাপাশি বড় ইনিংস খেলে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেওয়া। ব্যাট হাতে ২০২২ সালটি অসাধারণ কাটিয়েছেন লিটন দাস। কিন্তু গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভারত সফর থেকেই তার ব্যাটে খরার টান।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে তো ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ ছিলেন লিটন দাস। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে করেন ৭, ০, ০! মানে তিন ম্যাচে করেন মাত্র ৭ রান। দুই ম্যাচেই পুরতে হয় ‘ডাক’ মারার লজ্জায়। ব্যর্থতার সেই ধারা ধরে রেখে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও ব্যর্থ হয় লিটন দাসের ব্যাট। খেলেন ১২ ও ৯ রানের ইনিংস। তাতে মৃদুস্বরে হলেও একটা ফিসফিসানি উঠতে শুরু করেছিল। তাই লিটন দাস যে কোনো মূল্যে বড় ইনিংস করে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই যে তিনি মাঠে নামেন, সেটা শুরুতেই স্পষ্ট হয়ে যায়। নিজে মোকাবিলা করা প্রথম বলে ১ রান নিলেও পরের তিনটি বলই তিনি ডট দেন।
নিজেকে বদলে ফেলেই কাল রনি তালুকদারের সঙ্গে গড়েন ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২২ বলে ২৪ রান করে রনি তালুকদার আউট হওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৮৪ রানের জুটি। ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো ৭৩ রানের ইনিংসটি খেলে যখন প্যাভিলিয়নে ফেরেন লিটন দাস, বাংলাদেশের নামের পাশে তখন জ্বলজ্বল করছিল ১৭ ওভারে ১৩৯ রান।
দলকে বড় পুঁজি এনে দেওয়ায় লিটন দাসের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তর অবদান কম নয়। তিনি শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে ৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। পরে বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে মিলেছে জয়, মিটেছে ইংলিশদের ধবলধোলাই করার তৃষ্ণা।