শখের বসে সেলাই শিখে ২০০ টাকার বেডশিট বিক্রি করে এখন তিনি লাখপতি। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে কাপড় কাটিংয়ের ১০ জনসহ মোট ১০০ নারী কর্মী কাজ করছেন। কথা হচ্ছে নারী উদ্যোক্তা মাসুদা বেগমকে নিয়ে। তিনি রংপুরে মিঠাপুকুরের জায়গীর এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামী একজন এনজিও কর্মী।
তবে অন্যান্য উদ্যোক্তার চেয়ে মাসুদার গল্পটা আলাদা।
উদ্যোক্তা মাসুদা বেগম বলেন, ২০০৪ সালে এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তখন রংপুর নগরীতে খালাতো বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ দেখে শখ হয় কাজ শেখার। এক সময় বোনের কাছে কাজ শেখেন। এরপর তিনি নগরী রেলস্টেশন এলাকা থেকে ২শ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া বেডশিট কিনে আরও ভালোভাবে কাজ শেখে ব্যবসায়ী কার্যক্রম শুরু করেন। ২০০৯ সালে চাচাতো ভাইকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। আর বিয়ের পর থেকে স্বামীর সমর্থন পেয়ে ব্যবসা বাড়তে থাকে তার। করোনার সময় কিছুটা ঘাটতি হলেও এখন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
মাসুদা বেগম বলেন, একজন নারী কোনো না কোনো ক্ষেত্রে সফল। হয়তো কিছু সাময়িক বিফলতা বা পেছনে ফিরে যাওয়া প্রত্যেক মানুষের জীবনেই আসে হোক সে নারী বা পুরুষ। এসব ছাপিয়ে তার সফলতাটাই সবচেয়ে বেশি। আমার ক্ষেত্রে যদি বলি এখন পর্যন্ত সফল। আমি কখনো নিজেকে বিফল নারী হিসেবে দেখি না। মানুষের জীবনে চড়াই উৎরাই থাকে তা মেনে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।
তিনি বলেন, আমি যখন শখের বসে সেলাইয়ের কাজ শিখি তখন অনেক কটু কথা শুনেছি। কিন্তু এসব ছাপিয়ে আজ যখন আমি সফল হয়েছি এখন অনেকেই বাহবা দেন। ব্যবসা শুরুর সময় থেকেই আমার পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি এরপরে বিয়ে হওয়ার পর আমার স্বামী ব্যবসা বড় করার সাহস দিয়েছেন। সবদিক থেকে সমর্থন পাওয়ার ফলে আজ আমি প্রায় একশ নারীর রোজগারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। আমি বলি নারী মানেই সফল, নারীরা কখনো বিফল হয় না। হয় সাংসারিক জীবনে সফল বা সন্তান লালন পালনের সফল বা ব্যবসায়ীক হিসেবে সফল। এক কথায় নারীরা কোনো না কোনো ক্ষেত্রে সফল।
রংপুরের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. শামিম হোসেন বলেছেন, বর্তমানের লাখপতি মাসুদা বিসিকে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য চার লাখ টাকা ক্ষুদ্র লোন দেওয়া হয়েছে। লাখপতি মাসুদা মতো আরও ৪৫ জন উদ্যোক্তা বিসিকের আর্থিক সহায়তায় ক্ষুদ্র লোন নিয়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সামান্য সহযোগিতায় তারা এতদূর এগিয়ে যেতে পারায় আমরা খুবই আনন্দি।