শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন

২ হাজারেরও বেশি আফগান আমিরাতের আটককেন্দ্রে 

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০৩:০৮

সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষ দেশছাড়া প্রায় ২ হাজার ৭০০ আফগান নাগরিককে নির্বিচারে ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এসব আফগানকে অন্যত্র পুনর্বাসন বা শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার আইনি পথও খোলা নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমিরাত হিউম্যানিটারিয়ান সিটিতে থাকা আফগানদের বেশির ভাগই হতাশা এবং নানা ধরনের মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন, তারা আইনি পরামর্শের সুযোগ পাচ্ছেন না এবং তাদের শিশুরাও পর্যাপ্ত শিক্ষাসুবিধা পাচ্ছে না। তাদের বসবাসের পরিস্থিতিরও ব্যাপক অবনতি হয়েছে। আটকরা (কেন্দ্রে) ব্যাপক ভিড়, অবকাঠামো ক্ষয় এবং পোকামাকড়ের উপদ্রবের কথাও জানিয়েছেন। এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউ আমিরাতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য চাওয়া হলে তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আফগানদের অন্যত্র পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তর এক চিঠিতে মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছে, আমিরাতের হিউম্যানিটারিয়ান সিটিসহ অন্যত্র থাকা ‘উপযুক্ত’ আফগানদের পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্থায়ী’ অঙ্গীকার রয়েছে। আমিরাতের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান কাবুল দখলে নেওয়ার পর আফগানিস্তান ছাড়া হাজারও শরণার্থীকে তারা তাদের দেশে অস্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তারা বলেছিলেন, দেশছাড়া আফগানরা যেন নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে থাকতে পারে, তা নিশ্চিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; তাদের পুনর্বাসনে আবুধাবি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কাজ করছে। ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার সমাপ্তির বিশৃঙ্খলাপূর্ণ সময়ে একাধিক বেসরকারি গোষ্ঠী ও আমিরাতের সেনাবাহিনী কয়েক হাজার আফগানকে উড়িয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেওয়ার পরও বেসরকারি অনেক গোষ্ঠীরই ভাড়া করা বিমান চালু ছিল, সেসব ফ্লাইটেও অনেক আফগান দেশ ছাড়েন।

ঐ দেশছাড়া আফগানদের আমিরাতের হিউম্যানিটারিয়ান সিটি ও তাসামিম ওয়ার্কার্স সিটিতে রাখা হয়, সেখানকার অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সগুলোকে শরণার্থীদের বাসস্থানে রূপান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে পুনর্বাসিত হন। কিন্তু ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ আফগান অন্যত্র পুনর্বাসনের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারায় এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আমিরাতেই আটকে আছেন, যাকে এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে আটক’ বলে অভিহিত করেছে। এইচআরডব্লিউ-র সংযুক্ত আরব আমিরাত গবেষক জোয়ে শিয়া বলেছেন, আমিরাতের কর্তৃপক্ষ হাজারেরও বেশি আফগান শরণার্থীকে ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংকীর্ণ ঘরে শোচনীয় অবস্থায় আটকে রেখেছে, তাদের আবেদনের অগ্রগতির কোনো আশাও দেখা যাচ্ছে না।

এইচআরডব্লিউ গত বছরের শেষ দিকে আমিরাতে থাকা ১৬ আফগানের সাক্ষাত্কার নিয়েছিল। ঐ সাক্ষাৎকারে দেশছাড়া আফগানরা বলেছিলেন, তারা অবাধে তাদের থাকার জায়গা ত্যাগ করতে পারেন না। হাসপাতালে বা যে একমাত্র শপিং মলে তাদের যাওয়ার অধিকার রয়েছে, সেখানে গেলেও নিরাপত্তা রক্ষী বা তত্ত্বাবধানকারীদের নজরদারিতে থাকতে হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আমিরাতি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক আইন এবং আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নির্দেশনা না মেনে ঐ আফগানদের ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ আটকে রেখেছে। উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক ঘোষণায় স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। এইচআরডব্লিউ দেশছাড়া ঐ আফগানদের তাত্ক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতে, আশ্রয়ের আবেদন ও সুরক্ষা নিশ্চিতের প্রক্রিয়ায় তাদেরকে সংযুক্ত করতে এবং তাদের আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা যেখানে থাকতে চায়, সেখানে থাকার অনুমতি দিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ইত্তেফাক/ইআ