শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ওমান উপসাগরে চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ নৌ মহড়া 

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৬:৪০

সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটিয়ে এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে ইরান। ওমান উপসাগরে ১৫ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত নৌ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এতে তিন দেশের বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ অংশ নিচ্ছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাভাবিকভাবেই এতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। তিন শত্রু দেশের যৌথ মহড়ার ওপর সতর্ক নজর রাখছে ওয়াশিংটন। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার (১৫ মার্চ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'মেরিন সিকিউরিটি বেল্ট' নামে এই মহড়ার ২০২৩ সংস্করণ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নৌবাহিনীর মধ্যে বাস্তব সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি ইতিবাচক শক্তি প্রদান করবে।

সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটিয়ে এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে ইরান।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনুশীলনের সক্রিয় পর্বটি ১৬ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এ সময় দিবাগত রাতে আর্টিলারি ফায়ারিংসহ বিভিন্ন সামরিক কৌশল অনুশীলন করা হবে। বেইজিং-তেহরানের সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে।

বেইজিং জানিয়েছে, এই মহড়ায় আরও কয়েকটি দেশ অংশ নিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি তারা। ওমান উপসাগর পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরের মধ্যে অবস্থিত। এর রয়েছে ইরান, পাকিস্তান, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলরেখা। 

বেইজিং-তেহরানের সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে, ত্রিপক্ষীয় সামরিক মহড়ার ওপর সতর্ক নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, 'আমরা দেখব। স্পষ্টতই, আমরা এই প্রশিক্ষণ অনুশীলনটি পর্যবেক্ষণ করব যাতে এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ বা এই অঞ্চলে আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি না করে।'

অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউস এই প্রশিক্ষণ অনুশীলন নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। কারণ এটিই প্রথম নয় যে রুশ ও চীনারা একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মার্কিন মুখপাত্র বলেন, 'সব দেশই প্রশিক্ষণ নেয়। আমরা সবসময় এটা করি। যতটা সম্ভব দেখব।'

এর আগে ২০১৯ সালে চীন, রাশিয়া ও ইরান একই ধরনের নৌ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল।

এর আগে ২০১৯ সালে চীন, রাশিয়া ও ইরান একই ধরনের নৌ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। ২০২২ সালে তিনটি মিত্র দেশ ভারত মহাসাগরেও নৌ মহড়া করেছিল। বর্তমানে, ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। 

বিশ্ব ব্যবস্থায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথা। সেই সঙ্গে ইরান মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে চলেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন-রাশিয়া-ইরানের নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। 

তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসেবে দেখা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে। কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা যেভাবে তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রেখেছে তাতে ইরান-সৌদি দ্বন্দ্ব ব্যাপকভাবে অবদান রেখেছে।

কিন্তু সাত বছর পর ১০ মার্চ ইরান ও সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্মত হয়। আর এই চুক্তির মধ্যস্থতা করেছে চীন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে চরম অস্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র। 

সাত বছর পর ১০ মার্চ ইরান ও সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্মত হয়।

একদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম দুটি মুসলিম দেশ হাত মেলালে আমেরিকানদের মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সুযোগ নেওয়ার পথ সংকুচিত হবে। অন্যদিকে, এ অঞ্চলে উদীয়মান শক্তি হিসেবে চীনের উত্থানকে স্বাগত জানানো হবে। এই নতুন পরিস্থিতি কোনোভাবেই মার্কিন স্বার্থের পক্ষে যাবে না।

ইত্তেফাক/ডিএস