শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

কাজে ফাঁকি দেওয়া মানে নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৫:০০

কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে পিছনের দিকে টানিয়া নামাইতে হইলে সেই জাতির জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ-বিবাদ-অনৈক্যের বীজ ঢুকাইয়া দেওয়াই যথেষ্ট। তাহারা পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ, সংঘাত-সহিংসতা, প্রতিহিংসা ও শত্রুতার মাধ্যমে কথায় কথায় ঝগড়া-বিবাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি, খুনাখুনিতে নিমজ্জিত হইবে। আসল কাজে ফাঁকি দিবে। আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অতীতে এমন দ্বন্দ্ব-বিবাদ-বিসংবাদের অসংখ্য ঘটনা দেখিয়াছি। দেখিয়াছি যে, এইভাবে ঐক্যহীনতা ও বিবাদের কারণে হিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণই তাহাদের নেশা হইয়া উঠে। ফাঁকি পড়ে আসল কাজে। ফলে সেই সকল জাতি ক্রমশ অগ্রসর হয় ধ্বংসের দিকে। এই ক্ষেত্রে কোনো বুদ্ধিমান ত্রাতা আসিয়া যদি অনৈক্য জাতির মধ্যে ঐক্যসাধন করিতে পারে, তাহা হইলে সেই জাতি স্বীয় শক্তিবলে পুনরায় স্বমহিমায় জাগিয়া উঠে। আধুনিককালে একজন সুনাগরিক রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ। আর সুনাগরিকদের অন্যতম বড় গুণ হইল ঐক্য থাকা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বলা হইয়া থাকে, বুদ্ধি ব্যতীত ঐক্য হয় না, আর সুনাগরিকের প্রধান গুণ হইতেছে বুদ্ধি। কারণ বুদ্ধিমান নাগরিকই বুঝিতে পারে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান কীভাবে করা সম্ভব। এই জন্য বুদ্ধিমান ও সুশিক্ষিত নাগরিক ব্যতীত উন্নত রাষ্ট্র গঠন করা যায় না। সুনাগরিক হইতে হইলে তিনটি গুণের সমাহার হইতে হয়। এই তিনটি গুণ হইতেছে—বুদ্ধি, বিবেক ও আত্মসংযম। সুতরাং আমাদের অবশ্যই বুদ্ধিমান, বিবেকসম্পন্ন ও আত্মসংযমী হইতে হইবে। আমাদেরও অব্যাহত প্রচেষ্টা থাকিতে হইবে কীভাবে দেশ ও জাতির উন্নতিসাধন করা যায়। প্রত্যেকে নিজের সামর্থ্যের সকলটুকু দিয়া দেশের ও দশের মঙ্গলসাধন করা যায়। যেই দেশের নাগরিক যত সভ্য ও সুশীল, সেই দেশ তত উন্নত ও অগ্রসর।

কোনো জাতির পরিচয় নির্ণীত হয় তাদের আচার-আচরণে। মনে রাখিতে হইবে, দেশপ্রেম কথায় নহে, আচরণে ফুটাইয়া তুলিতে হয়। কাহারো ভিতরে দেশপ্রেম থাকিলে তাহা ঐ ব্যক্তির আচরণেই ফুটিয়া উঠে। আমাদের দেশ স্বাধীন হইয়াছে অর্ধশতাধিক বৎসর পূর্বে। আমরা আরও বেশি আগাইয়া যাইব, যদি আমরা ‘এক’ থাকি। আমাদের মধ্যে ঐক্য থাকিলে তবেই আমরা উন্নতি জাতির সোপানে উঠিতে থাকিব। তিন-চার দশক পূর্বেও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাইবার প্রধান উপায় জলপথ। উহা ছিল প্রাকৃতিক ব্যবস্থা। কিন্তু গত ৫০ বৎসরে সারা দেশে অসংখ্য রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট তৈরি হইয়াছে। এমনকি মাকড়সার জালের মতো বিছানো নদনদীর শাখাপ্রশাখায় পরিপূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলে, যেইখানে রাস্তাঘাট পুল-কালভার্ট করিবার সুযোগ ছিল না,  গত তিন যুগে সেই সকল অঞ্চলেও রাস্তাঘাট হইয়াছে, বড় বড় সেতু করা গিয়াছে। এখন সড়কপথে গাড়িতে চড়িয়া উপজেলা হইতে জেলায়, জেলা হইতে বিভাগে, রাজধানীতে দ্রুততম সময়ে যাওয়া-আসা করা যায়।

সুতরাং নাগরিকগণ যেমন রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগ করে, তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্যও রহিয়াছে। বস্তুত যেই দেশের নাগরিক যেইরূপ, সেই দেশটি সেইরূপেই গড়িয়া উঠে। আমাদের প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করিতে হইবে। কাজে ফাঁকি দিলে নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া হইবে। অসততা ও চালাকির আশ্রয় লইলে সেই ফাঁদে নিজেকেই পড়িতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে, উন্নয়নকাজে যেই সম্পদ ব্যবহৃত হয় তাহা সরকার, রাষ্ট্র তথা জনগণের সম্পদ। এই সম্পদের সদ্ব্যবহার তথা অপচয় রোধ করিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকিতে হইবে। সকল ধরনের দুর্নীতি, অপচয়, আত্মসাতের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ার মানসিকতা সৃষ্টি করিতে হইবে। আর এই সকল কাজ সঠিকভাবে করিতে আমাদের ইমান মজবুত করা প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নত দেশের মধ্যে যেই পার্থক্য তাহা আমাদের উপলব্ধি করিতে হইবে। উন্নয়নশীল দেশে জনগণকেই দায়িত্ব লইতে হয়। সুতরাং এই দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করিতে হইলে জনগণকে অবশ্যই সচেতন থাকিতে হইবে, ঐক্যবদ্ধ হইতে হইবে। নিজেকে প্রশ্ন করিতে হইবে, উন্নত দেশ গঠনে জন্য আমরা কি সুনাগরিক হইতে পারিয়াছি? আমরা কি ঐক্যবদ্ধ? নিজের কাজকে কি ফাঁকি দিই? এই উত্তর খুঁজিতে হইবে প্রত্যেকের নিজের ভিতরে।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন