শঙ্কা ও আশা। এই দুটি অনুসর্গ কি একই সময়ে একই দলে সওয়ার হতে পারে? হ্যাঁ, পারে। সিলেট স্টেডিয়ামে আজ শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেটা তো আজ বাংলাদেশ খেলতে নামছে শঙ্কা আর আশার নৌকায় চেপেই।
মাত্রই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে। কাজেই বাংলাদেশ দলে আত্মবিশ্বাসের পাত্রটা টইটম্বুরই। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাসের মধ্যেই দলে দেখা দিয়েছে চোট শঙ্কা। চোট পেয়ে জাকির হোসেন এরই মধ্যে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন। গতকাল আবার ফুটবল অনুশীলন করতে গিয়ে চোখে আঘাত পেয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মেহেদী হাসান মিরাজ। সতীর্থ হাসান মাহমুদের শট সরাসরি তার মুখে গিয়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চোটটা গুরুতর না হলেও বিসিবির চিকিত্সক দেবাশীষ চৌধুরী বলেছেন, মিরাজের চোখে একটু রক্ত জমে আছে। মিরাজ আজ খেলবেন কি না, শতভাগ নিশ্চিত নয়।
শঙ্কা আছে অধিনায়ক তামিম ইকবালের খেলা নিয়েও। কয়েক দিন ধরেই ভাইরাসজনিত জ্বরে ভুগছেন তিনি। যদিও জ্বর সত্ত্বেও দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন তামিম। ফলে তার খেলার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু যদি খেলতে না পারেন, সেটি হবে দলের জন্য বড় একটা ধাক্কা। কিন্তু এসব শঙ্কাকে পাত্তা দিলে কি চলে! বাংলাদেশ দল এই মুহূর্তে চোট শঙ্কাকে পাত্তা দেওয়ার অবস্থায় নেইও! ইংলিশদের বাংলাওয়াশ করে পুরো দলই বরং আত্মবিশ্বাসে ফুটছে। সেই আত্মবিশ্বাসের সুবাদেই বাংলাদেশ আঁকছে আশার ছবি। আয়ারল্যান্ডকে আরেক বার ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই করার আশা।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে আইরিশদের একবার করে হোয়াইটওয়াশ করার তৃপ্তির সুখ অনেক আগেই পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ড দল প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ সফরে এলেই তাদেরকে ধবলধোলাইয়ের স্বাদ দেয় মোহাম্মদ আশরাফুলের বাংলাদেশ। এরপর ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডে গিয়ে আইরিশদের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে মুশফিকুর রহিমের বাংলাদেশ।
২০০৮ সালের তুলনায় বাংলাদেশ দল এখনো আরো অনেক বেশি পরিণত। সুতরাং তামিম-সাকিবরা যে কোনো মূল্যে ১৫ বছর আগের সেই সুখস্মৃতি ফেরাতে চাইবেন। ওয়ানডের ওভারঅল পরিসংখ্যানও বাংলাদেশকেই আত্মবিশ্বাসী করছে। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দুই দল এ পর্যন্ত ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে। তার সাতটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড জিতেছে দুটিতে, একটিতে ফল হয়নি, অন্যটি ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়।
দলীয় শক্তিমত্তা, পরিসংখ্যান—সবদিক থেকেই এগিয়ে বাংলাদেশ। সিরিজটাও বাংলাদেশ খেলছে ঘরের মাঠে। সুতরাং আইরিশদের বিপক্ষে তামিম ইকবালের দলের গায়েই ফেভারিটের তকমা। আর এই জায়গাতেই একটু যেন শঙ্কিত বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কান কোচ। তিনি আয়ারল্যান্ডকে বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘আমরা আয়ারল্যান্ডকেও ইংল্যান্ডের মতোই সমীহ করছি।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো দলকে হালকা করে দেখার সুযোগও নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে বাংলাদেশ দল বর্তমানে যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে আইরিশদের আরেক বার হোয়াইটওয়াশ করার প্রত্যাশার ছবি আঁকেতেই পারছেন তামিম-সাকিবরা।
সাকিবের নামটি আসায় অন্য একটি বিষয় মনে পড়ে গেল। ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেই সাকিব দুবাইয়ে পাড়ি জমান এক বাংলাদেশি স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ‘আরাভ জুয়েলারি’ নামে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে। পরে জানা যায়, সেই স্বর্ণের দোকানের মালিক ‘আরাভ খান’ পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সাকিবকে এ বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু সব জেনেও সাকিব দুবাই যান এবং দোকানটি উদ্বোধনও করেন তিনি। সেই বিতর্ক মাথায় নিয়েই দুবাই থেকে ফিরে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাকিব। প্রশ্ন হলো সাকিবের এই বিতর্কিত ঘটনা কি দলে প্রভাব নেতিবাচক প্রভা ফেলবে? এক কথায় উত্তর, না। বাইরে যতকিছুই ঘটুক, তা সাকিবের নিজেরই মাঠের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে না, সেখানে দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে কি করে!
উল্লেখ্য, ম্যাচটা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায়।