শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার উন্নতি প্রয়োজন

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:৩০

আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক হইল প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আমরা সমস্যাকে জিয়াইয়া রাখি। সেই সমস্যা যখন ‘মহাসমস্যা’ হইয়া চারিপাশ হইতে আমাদের ঘিরিয়া ধরে, তখন হাপিত্যেশ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রশ্নে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবিক অর্থেই আমরা যাহার পর নাই উদাসীন, অসতর্ক, অসচেতন। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়িয়া গিয়াছে। ধারাবাহিক অগ্নিদুর্ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হইতেছে; কিন্তু ইহার পরও কি আমাদের টনক নড়িতেছে?

দার্শনিক এডমন্ড বার্ক কয়েক শত বৎসর পূর্বে বলিয়া গিয়াছেন, ‘সতর্কতা হইল নিরাপত্তার জননী’। বার্কের কথায় কর্ণপাত নাই-বা করিলাম, ‘আগুন লইয়া খেলার পরিণাম ভালো নহে’—এই সতর্কবাণীকে উড়াইয়া দেওয়া তো নিজের পায়ে নিজেই কুঠার মারিবার শামিল! ১৬১০ সালে আগুন লাগিয়া ঢাকার প্রায় অর্ধেক এলাকা পুড়িয়া গিয়াছিল বলিয়া আমরা জানি। সেই অগ্নিকাণ্ড যে নিছক দুর্ঘটনা ছিল, তাহা কে বলিতে পারে? কিন্তু আজিকার সময়ে অগ্নিকাণ্ড যেইভাবে আমাদের সর্বস্বান্ত করিতেছে, তাহাকে কি নিতান্তই দুর্ঘটনা বলা যায়? চলতি মাসের শুরুর দিকে দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক ভবনে নাই অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা। নাই ফায়ার ড্রিলের বন্দোবস্ত। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকিলেও নাই রিফিলের ব্যবস্থা। একাডেমিক ভবনের তুলনায় আবাসিক হলের অবস্থা শোচনীয়। অথচ সেইখানেই বহু শিক্ষার্থীর বসবাস। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ইহা ছাড়া শহরাঞ্চলের অধিকাংশ ভবনেই অনুরূপ অবস্থা বিদ্যমান। উক্ত প্রতিবেদন লইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন নগর পরিকল্পনাবিদগণ। এইদিকে দেশের অধিকাংশ হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক, হোটেল, শিল্পকারখানায় ফায়ার হাইড্রেন্ট নাই। এমনকি আমাদের কিছু উপজেলায় এখনো নাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার এই দৈন্য দুঃখজনক। 

শহর-নগরের রাস্তা, কারখানা, হোটেল, শপিংমল প্রভৃতিতে ফায়ার হাইড্রেন্টের ব্যবস্থা থাকিবে না কেন? অধিকাংশ সময় পানিস্বল্পতার কারণে আগুন নিভাইতে সমস্যায় পড়েন ফায়ার ফাইটাররা। সরু রাস্তায় পানি বহনকারী গাড়ি প্রবেশ করাইতে পড়িতে হয় বিপত্তির মুখে। ইহার ফলে আগুনে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক সময় অধিক হইয়া থাকে। আবার আগুন লাগিলে অন্য উপজেলা হইতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ডাকিয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এক সেকেন্ড সময়ও যেই হেতু অতি মূল্যবান, সেই হেতু প্রতিটি থানা-উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহরাঞ্চল জুড়িয়া পরিকল্পিতভাবে ‘স্ট্রিট হাইড্রেন্ট’ বসানো প্রয়োজন। যদিও ইহা ব্যয়সাপেক্ষ, তবে পর্যায়ক্রমে হইলেও ইহার বাস্তবায়ন সম্ভব। চারিপাশে নদীবেষ্টিত ঢাকা শহরে পানির অভাবে আগুন নিভাইতে না পারিবার মূল কারণ শহরের মধ্যকার খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়ের বিলুপ্তিসাধন বা নদনদীর সহিত বিচ্ছিন্নতা। এমতাবস্থায়, সকল পর্যায়ে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা গ্রহণ করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনমাফিক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার অনুরোধ জানাই। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সহিত সমভাবে জরুরি ব্যক্তিসচেতনতাও। বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত তদন্ত কমিটি যেই সকল সুপারিশ করিয়া থাকে, তাহার বাস্তবায়নও আবশ্যক।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন