মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ফসলি জমিতে কারখানা, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৩, ২১:১৬

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার পুড়িয়ে ফার্নেস অয়েল উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

জানা গেছে, উপজেলার উত্তর শ্যামপুর এলাকায় ফসলি জমির পাশে মেসার্স দেশ গড় নামে একটি টায়ার কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। বেল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির জমি ১০ বছরের চুক্তিতে ইজারা নিয়ে কারখানাটি তৈরি করেন। এর সামান্য দূরত্বেই রয়েছে হাজার হাজার মানুষের জনবসতি। যারা প্রতিনিয়ত চলাচল করছেন কারখানাটির পাশ দিয়ে।

ছবি: ইত্তেফাক

স্থানীয় কৃষক অভিযোগ করেন, জমির পাশেই টায়ার কারখানা। বৃষ্টির পানির সঙ্গে টায়ার পোড়ানো বর্জ্য ও তেল আবাদি জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। গত আমনের মৌসুমে মাত্র ৫ থকে ৬ মণ করে ধানের ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি। অনেকে একমুঠো ধানও পায়নি। আগে এসব জমিতে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যেত। কারখানার মালিক নাসির উদ্দিন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জরিমানা দেওয়ার কথা বললেও এক টাকা কানাকড়িও দেননি।

তারা আরও বলেন, আগে দিনের বেলায় টায়ার পোড়ানো হতো। কিন্তু কালো ধোঁয়া ও উদ্ভট গন্ধ সহ্য করতে না পেরে স্থানীয়রা বাধা দেয়। এখন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত টায়ার পুড়িয়ে তেল উৎপাদন করা হয়। ফলে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে উদ্ভট গন্ধ। এতে খাওয়া ও ঘুমের চরম ব্যাঘাত ঘটছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টায়ার কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা টায়ার পোড়ানো মেশিন পরিষ্কার করছে। কারখানার অন্যান্য কাজ করছেন আরও ৮ জন। কারখানার বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য রাখা হয়েছে। বৃষ্টি হলেই বর্জ্যগুলো বোরো ধানের জমিতে গড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

ছবি: ইত্তেফাক

কারখানার ম্যানেজার আব্দুল বাছেদ বলেন, টায়ার কারখানায় কাজের শুরুতে একটু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। পরে ঠিক হয়ে যায়। অসাবধানতাবশত  কৃষকের ধানের ক্ষতি হয়েছিলো শুরুতে। তাদের ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে। 

কারখানার মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, রাতে টায়ার পুড়িয়ে তেল উৎপাদন করলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের তেমন ক্ষতি হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, টায়ার কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের কারণে শ্বাসকষ্ট, সর্দি, বমি ভাবসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল গফুর বলেন, মেসার্স দেশ গড় টায়ার কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এ বিষয়ে কারখানার কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।    

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বলেন, টায়ার কারখানার অবস্থা দেখে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এবি/পিও