শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিভক্ত ইইউ

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৪:১৬

চীনকে নিয়ে চিন্তা বেড়েছে ইইউ এর। বিশেষ করে, শি জিনপিংয়ের মস্কো সফরের পর। চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে পারে, মনে করছে ইইউ। লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, 'শি জিনপিং যদি একজন ঘোষিত যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ান, তাহলে আমাদেরও চীনকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।'

গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট। তারপর মস্কো সফরে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন শি জিনপিং।

লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস

লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করছেন, চীনের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি এটা করা হয়, ততই ভালো। তবে ইইউ এর সব সদস্য দেশ এ রকম চরম পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে নয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইইউ এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে শি ও পুতিন অন্তত ৪০ বার বৈঠক করেছেন। ফলে এখন শি রাশিয়া গিয়ে পুতিনের পাশে থাকার বার্তা দেবেন সেটাই স্বাভাবিক। ইইউ এর দেশগুলোর সাধারণ মনোভাব হলো, চীন এখন রাশিয়ার দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইছে।

গত কয়েক বছরে শি ও পুতিন অন্তত ৪০ বার বৈঠক করেছেন।

চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ এখনো রাশিয়ার কাজকে আগ্রাসন বলেনি। জাতিসংঘে চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে ভোট দেয়নি। তারা রাশিয়ার প্রচারমূলক কথার পুনরাবৃত্তি করেছে। প্রেসিডেন্ট শি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্কে কোনো সীমারেখা থাকবে না। 

এমনিতেই ইইউ এর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আগের তুলনায় খারাপ। রাশিয়ার কারণে তা আরও খারাপ হয়েছে। রাশিয়াকে চীনের সমর্থন নিয়ে বেশ কয়েকটি ইইউ দেশ মনে করছে, চীন এবার রাশিয়াকে অস্ত্র বিক্রি করতে পারে। 

জাতিসংঘে চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে ভোট দেয়নি।

ইইউ এর সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, চীন যে রাশিয়াকে অস্ত্র বিক্রি করতে চায়, এমন কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই। চীন বিশেষজ্ঞ স্টেক জানিয়েছেন, চীন এখন রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক কার্যকলাপ পুরোপুরি বজায় রেখেছে।  

রাশিয়া য়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে, তাকেও সমর্থন করেছে চীন। তারা রাশিয়াকে যে টায়ার, ট্রাক, পোশাক ও অন্য জিনিস দিচ্ছে, তা রাশিয়ার সেনা ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু এখনো তারা কোনো অস্ত্র রাশিয়াকে দেয়নি বলে জানান স্টেক।

ইইউ এর সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গ

স্টেকের মতে, তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। উইঘুর নিয়ে ইইউ এর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। ফলে চীনও চাপে আছে। ইইউ চীনের উপর কিছু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। তবে ইইউ আরও ব্যবস্থা নিলে তাদের অর্থনীতিতে চার চাপ পড়বে।

আমেরিকার ডাকে ইইউ এখনো সাড়া দেয়নি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন চাইছেন, চীনকে কোণঠাসা করতে ইইউ এবার আমেরিকার সঙ্গে হাত মেলাক। কিন্তু ইইউ তার থেকে বিরত থেকেছে। ইইউ এর দেশগুলোর মধ্যে চীনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য করে জার্মানি। 

তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।

তারা ও ইইউ এর অন্য বেশ কয়েকটি দেশ চীনের লাভজনক বাজার থেকে চলে আসতে রাজি নয়। তবে দুই তরফের মধ্যে সন্দেহ আছে, চীন ও ইইউ একে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ইইউ-চীন কম্প্রিহেনসিভ ইনভেস্টমেন্ট এগ্রিমেন্টও ঠাণ্ডা ঘরে চলে গেছে।

স্টেক জানিয়েছেন, চীন এখন চাইছে, তারা ইইউ এর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। ইইউও একইভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলবে। তারপর চুক্তিতে সই হবে। ইইউ সূত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে, ইইউ দেশগুলো চীন নিয়ে বিভক্ত। কিছু দেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চায়। আবার কিছু দেশ আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে।

ইত্তেফাক/ডিএস