শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আহলান সাহলান ইয়া শাহরু রমাদান

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৩:৩০

আহলান সাহলান ইয়া শাহরু রমাদান। স্বাগত হে রমাদানুল মুবারক। সারা মুসলিম জাহানে শুরু হইয়াছে আত্মসংযম ও খোদাভীরুতা অর্জনের পবিত্র মাস রমাদান। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমাদান। এই মাসের মর্যাদা ও গুরুত্ব সমাধিক। কারণ এই মাসেই আল কুরআনসহ অধিকাংশ আসমানি কিতাব নাজিল হইয়াছে। এই মাসে এমন একটি রাত (লাইলাতুল কদর) রহিয়াছে যাহার ইবাদত হাজার মাস হইতেও উত্তম। তাহা ছাড়া এই মাসে একটি নফল আদায় অন্য মাসে একটি ফরজ এবং একটি ফরজ অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সমতুল্য। তাই পবিত্র শাহরু রমাদান উপলক্ষে আমরা সারা মুসলিম জাহানের মুসলিম ভাইদের প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মুবারকবাদ।

প্রথমেই বলা প্রয়োজন, আমরা কথাবার্তায় রমজান বলি, আসলে আরবি উচ্চারণ অনুযায়ী ইহা হইবে রমাদান বা রমজান  (আরবি দোয়াদ বর্ণ উচ্চারণের হেরফেরে)। এই শব্দটি মূল ‘রমজ’ শব্দ হইতে আগত। ইহার অর্থ জ্বালাইয়া-পুড়াইয়া ফেলা। যেহেতু রমজানের এক মাসের সওম পালন আমাদের পাপ-পঙ্কিলতা জ্বালাইয়া-পুড়াইয়া ভস্ম করিয়া দেয়, তাই ইহাকে রমাদান বলে। এই সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাস পায়, সে যেন সওম পালন করে (২ :১৮৫)। কুরআন শরিফে সিয়াম শব্দটি (সওম শব্দের বহুবচন) ব্যবহৃত হইয়াছে, রোজা নহে। কেননা রোজা শব্দটি ফারসি বা উর্দু। অনুরূপভাবে আমরা বলি, মাহে রমজান। এখানে মাহে অর্থ মাস। ইহাও উর্দু শব্দ। এই জন্য আমরা এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে আল কুরআনের পরিভাষা ব্যবহারেরই পক্ষপাতী।

এখন দেখা দরকার রমাদানের সওম বা রোজার প্রবর্তন কীভাবে হইল? আমরা জানি, দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে রমাদানে মাসব্যাপী সওম পালনের ফরজ বিধান জারি করা হয়। তাহার মানে কি এই যে, ইহার আগে সওমের বিধান ছিল না? অবশ্যই ছিল, তবে তাহার প্রকৃতি তথা সময়সীমা, মাস ও সংখ্যা ছিল ভিন্ন। যেমন—প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা ফরজ ছিল আদিপিতা ও নবী হযরত আদম (আ.)-এর ওপর। ইহা আইয়ামে বিজের রোজা নামে পরিচিত। এই রোজা মহানবী (স.) নিয়মিত রাখিতেন। ইহা আমাদের জন্য সুন্নত। মানবজাতির জন্য প্রথম এই রোজা প্রবর্তনের কারণ হইল—হজরত আদম (আ.) বেহেশতে থাকাকালীন আল্লাহর আদেশ অমান্য করিয়া গন্ধ ফল ভক্ষণ করিলে তাহার দেহ কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। ইহা হইতে পরিত্রাণ পাইতে ফেরেশতাদের ফরিয়াদের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.)-এর নিকট ওহি পাঠাইয়া বলিলেন, ‘তুমি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ সওম পালন করো।’ সেই হইতে পৃথিবীতে সওম বা রোজার  বিধান পালিত হইয়া আসিতেছে। এমনকি আমরা সনাতন ধর্মেও প্রতি মাসের উল্লিখিত তিন দিন উপবাস পালন করিতে দেখি। যদিও রোজা ও উপবাসের মধ্যে আকাশ-জমিন পার্থক্য রহিয়াছে। হজরত নূহ (আ.)-এর যুগ হইতে হজরত ইব্রাহিম, দাউদ, মুসা ও ঈসা (আ.) ও শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) পর্যন্ত প্রতি মাসে এই তিনটি রোজা রাখিবার প্রচলন ছিল। তবে রমাদানের রোজার মাধ্যমে সেই সকল রোজার ফরজিয়াত রহিত হইয়াছে। বর্তমানে আশুরাসহ এই সকল রোজা সুন্নতি আমল হিসাবে এখনো কার্যকর রহিয়াছে।

এখন কথা হইল, রমাদানের রোজা আমরা কেন পালন করি? আল্লাহ তায়ালা এই ব্যাপারে পরিষ্কার করিয়া বলিয়া দিয়াছেন, ‘তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হইয়াছে, যেইভাবে ফরজ করা হইয়াছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাহাতে তোমরা মুত্তাকি বা পরহেজগার হইতে পারো (২ :১৮৩)। আবার হাদিসে কুদসিতে বলা হইয়াছে, ‘আসসাওমু লি। অয়া আনা উজজি বিহি।’ রোজা কেবল আমার উদ্দেশ্যেই পালন করা হয়। আর আমিই ইহার প্রতিদান দিব। কেননা ইহাতে রিয়া বা লোক দেখানোর অবকাশ নাই।  ইসলাম ধর্মে সকল আমল নির্ভর করে নিয়তের উপর। আর রোজায় নিয়ত সহিহ ছাড়া রোজা রাখাই যায় না। ইহাতে সিয়াম পালনকারীর ইমান মজবুত হয়, পরহেজগারিতা বৃদ্ধি পায়। রোজা এমন এক ইবাদত যাহার মাধ্যমে বেহেশতের আটটি দরজার মধ্যে রাইয়ান দরজা দিয়া কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করিবেন। কিয়ামতের দিন রোজা বান্দাহর জন্য সুপারিশ করিবে। অতএব, আসুন, আমরা রোজা বা সওম পালনের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে উপকৃত হই, পরহেজগারিতা লাভ করি।  আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইত্তেফাক/এমএএম