শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রমজানুল মুবারকের তাৎপর্য

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৬:০০

রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমজানুল করিম শুরু হলো আজ থেকে। আহলান্ সাহলান্ মাহে রমজান। মুসলিমদের কাছে এই মাসটি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত মাস। ফারসি শব্দ রোজার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে সিয়াম বা সাওম যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। ইসলামি ধর্মতত্ত্ববিদ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘শাব্দিক অর্থে রোজা অর্থ বিরত থাকা হলেও শরিয়তে রোজা মানে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত কিছু কাজ থেকে নিবৃত থাকার পদ্ধতি অনুসারে বিশেষ কয়েকটি বিষয় থেকে বিরত থাকা ও নির্দিষ্ট শর্ত মেনে চলা।’ (ফাতহুল বারি, কিতাবুস সাওম, বাবু উজুবিস সাউমি রামাদান, পৃ. ১২৩)

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়-সুবহি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সবধরনের পানাহার এবং সেই সঙ্গে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামিক রীতি অনুযায়ী প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-সবল মুসলমানের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় ইবাদত। পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা পালন ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা পরহেজগারিতা অর্জন করতে পার।’ এছাড়াও সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে।’

পবিত্র রমজানুল মুবারকের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (স.) ইরশাদ করেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (স.) বলেছেন,  যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা পালন করবে তার পূর্বের সব গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে তার পূর্বের সব গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (স.) ইরশাদ করেছেন, রোজা ও কুরআন (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর দরবারে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ্ তায়ালা! আমি তাকে (রমযানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (বায়হাকি)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (স.) বলেছেন, যখন রমজান মাস আগমন ঘটে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং নরকের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় আর বিতাড়িত শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (বুখারি ও মুসলিম) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে শরিয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া রমজানের একটি রোজাও ভাঙে সে রমজানের বাইরে সারা জীবন রোজা রাখলেও এর বদলা হবে না। (তিরমিযি, আবু দাউদ)

হাদিসে কুদসিতে আছে, রসুল (স.) বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, রোজা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য; আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের মধ্যে কেউ যেন রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া-বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্তার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ মেস্ক-কস্তুরির সুঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। রোজাদারের খুশির বিষয় দুইটি—যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (সহিহ্ বুখারি)

হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একবার রসুল (স.) আমাদের শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করলেন এবং বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে এক মহান মাস, মুবারক মাস। এটি এমন মাস যাতে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ্ তায়ালা এই মাসের রোজাগুলোকে করেছেন (তোমাদের ওপর) ফরজ আর রাতে নামাজ আদায়কে তোমাদের জন্য করেছেন নফল।

এই মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল আমল করল সে ঐ ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে ঐ ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল। এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের সওয়াব হলো বেহেশত। এটা সেই মাস যে মাসে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, শেরপুর 

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন