পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। রমজান মাসে নগরীতে পানির চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় ওয়াসার পানির উৎস হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় গুণ। ফলে ওয়াসার পানির দৈনিক উৎপাদন প্রায় ৬ কোটি লিটার কম হচ্ছে। ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টি না হলে লবণাক্ততা কমবে না। উৎপাদন কম হওয়ায় নগরীতে রেশনিং করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার চারটি পানি শোধনাগার রয়েছে। তার মধ্যে মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার ও মোহরা পানি শোধনাগারের পানি হালদা নদী থেকে নিয়ে পরিশোধন করা হয়। এই দুটি শোধনাগারে পরিশোধনের দৈনিক ধারণক্ষমতা প্রতিটিতে ৯ কোটি করে ১৮ কোটি লিটার। কিন্তু গত প্রায় এক মাস যাবত হালদা নদীতে জোয়ারের সময় লবণাক্ততা পানি অনেক গভীরে ঢুকে পড়ছে। মাঝখানে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এখন লবণাক্ততার মাত্রা ৪/৫ গুণ বেড়ে গেছে। পানিতে লিটারে লবণাক্ততার মাত্র ৬০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত সহনীয় বলা যায়। কিন্তু এখন হালদার পানিতে লিটারে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মিলিগ্রাম লবণাক্ততা উঠানামা করছে। তাই শুধু নদীতে ভাটার সময় পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে দৈনিক প্রায় ১০ ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ থাকছে। ফলে ওয়াসার দৈনিক পানি সরবরাহ প্রায় ৬ কোটি লিটার কমে গেছে। জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, বৃষ্টি না হলে সংকট কাটবে না। আমরা এখন পানি মিশ্রিত করে সরবরাহ দিচ্ছি। এখন সরবরাহ করা পানিতে লিটারে ৩০০ মিলিগ্রাম রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে রেশনিং করে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। দৈনিক ৬ ঘণ্টা প্লান্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’
হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া হচ্ছে না। কাপ্তাই লেক থেকে পানি না ছাড়ায় জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদী থেকে লবণাক্ত পানি হালদা নদীতে ঢুকে পড়ছে। মূলত প্রতি বছরই বৃষ্টি না হলে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই সমস্যা সৃষ্টি হয়।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাঁচটি ইউনিট রয়েছে। তার মধ্যে লেকে পানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। চালু থাকা কেন্দ্র থেকে দৈনিক মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। কাপ্তাই লেকে পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। এর চেয়ে লেকে পানি বেশি হলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদেক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পরিশোধন শেষে নগরীতে যে সব পানি সরবরাহ দেওয়া হয় তাতে লিটারে ৩৫০ মিলিগ্রাম লবণাক্ততা রয়েছে। এটা পানীয় যোগ্য। হালদায় লবণাক্ততায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টা পানি পরিশোন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’ ওয়াসা দৈনিক পানি সরবরাহের সক্ষমতা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু বিতরণ নেটওয়ার্কের সক্ষমতা না থাকায় উৎপাদন কমিয়ে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দেওয়া হতো। এখন হালদায় লবণাক্ততায় সরবরাহ কমে দৈনিক প্রায় ৪০ কোটি লিটার দেওয়া হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়ায় নির্মিত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ থেকে পানি সরবরাহ চালু রয়েছে। এই দুটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ কোটি লিটার।
নগরীতে ওয়াসার প্রায় ৮৩ হাজার পানির সংযোগ রয়েছে। নগরীর উঁচু এলাকাগুলোতে দীর্ঘদিন যাবত পানি সংকট বিরাজ করছে। সরবরাহ লাইনে চাপ কম থাকায় উঁচু এলাকায় পানি পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে পানির বৈধ সংযোগ থাকলেও গ্রাহক পানি পাচ্ছে না। বিশেষ করে জালালাবাদ, খুলশী, লালখান বাজার, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, মনছুরাবাদ, কাট্টলিসহ কয়েক উঁচু এলাকার বাসিন্দা পানি সংকটে ভুগছে।