সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রশাসন ও থানাপুলিশের সহায়তায় সাটুরিয়ার বরাইদ ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে নদীর তীর ও পার্শ্ববর্তী জমি, সড়ক ও বাড়িঘর। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের জালশুগা, হামজা, গোপালপুর গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। এতে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে স্থানীয় ১২ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জানা গেছে, এলাকার মূল মাটি ব্যবসায়ী এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান চেয়ারম্যান, ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. জমির উদ্দিন, ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. রমজান আলী, ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. দেলোয়ার হোসেন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডি এম হোসেন।
স্থানীয়রা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে প্রভাবশালীরা এ অপকর্ম করে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আগত শিশুদের অভিভাবকরা অসহায়ের সুরে বলেন, বেপরোয়া বালু পরিবহনে এলাকা বালুময় হয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন ঘরবাড়ি নোংরা হয়ে যায়, অন্যদিকে অ্যালার্জিজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ ও বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ঠান্ডা-কাশি লেগেই থাকে। এ বিষয়ে বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন,পরিবহন ও বিক্রির বিষয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে তার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দিয়েই বালুভর্তি ট্রাক্টর চললে, এমন তথ্য দিলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
ইউপি সদস্য মো. রমজান আলী এ প্রতিবেদককে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলেন,‘পত্রিকায় নিউজ না করে কিছু টাকা নিয়ে যান। গাড়িপ্রতি কমিশন নেওয়ার বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ঐ টাকা প্রশাসনের সবাইকে ভাগ দিয়ে থাকি। এজন্য সড়কে গাড়ি চলতে পারে ও বালু উত্তোলন করে নির্বিঘ্নে ধলেশ্বরী নদীর মাটি বিক্রয় করা যায়।’ বরাইদ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ধলেশ্বরী নদী থেকে একাধিক মেম্বারসহ স্থানীয় কিছু নেতা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। এ ইউনিয়নের বাড়িঘর পাকা সড়ক তারা ভেঙে ফেলছে। এ বিষয়ে আমি ইউএনওর কাছে বালু তোলার ভিডিও পাঠানোসহ ও থানার ওসিকে নিজে জানিয়েছি। তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।’
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আরা জানান, ‘ধলেশ্বরী নদীতে একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা যাওয়ার আগেই তারা খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। ফলে মোবাইল কোর্টের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। ধলেশ্বরী নদী থেকে চুরি করে ড্রেজার ও মাহেন্দ্র দিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা না করে ড্রেজার মেশিন ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জেলহাজতে পাঠানো হবে।’