সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘মিশন’ সফল করিতে অগ্রসর হইতেছে ‘তাহারা’

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০:৩৪

‘পরিবেশ এখন অনুকূলে নাই? সময় নাও, ঘাপটি মারিয়া থাকো, রং বদলাও। বাহির হইতে যখন কিছু করিতে পারিতেছ না, তখন ভিতরে অনুপ্রবেশ করো। অনুপ্রবেশ করিতে গেলে বাধা আসিবে, সমস্যা নাই—কেমোফ্লেজ করো, অর্থ ব্যয় করো, পদ-পদবি ক্রয় করো। ইহা নূতন ও কঠিন মিশন। অপেক্ষা করো অনুকূল সময়ের। মিশন নিশ্চয়ই সফল হইবে!’

এই ধরনের ভাবনা-পরিকল্পনা লইয়াই রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা বহু দিন ধরিয়া অগ্রসর হইতেছে। তাহারা যেই বীজ বুনিয়াছে, সেইগুলি বড় হইতেছে। তাহারা অপেক্ষায় রহিয়াছে ফসল ঘরে তুলিবার। আমরা দেখিতেছি, কেবল আওয়ামী লীগই নহে, প্রত্যেক দলেরই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দখল করিয়া বসিয়া রহিয়াছে রাজাকারদের বংশধরেরা। আর মাত্র ৯-১০ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। এমনিতেই এই দেশের জাতীয় নির্বাচনের সময় জটিলতা বা ঝামেলার শেষ থাকে না। আসন্ন নির্বাচনে কাহারা আসিবে কিংবা আসিবে না, নির্বাচন লইয়া কত ধরনের সমস্যা তৈরি হইবে—কেহ জানে না। সুতরাং এই সমস্যাসংকুল পরিবেশে, কোনো রাখঢাক না করিয়া সোজাসাপটা বলা যায়, নির্বাচনের সময় রাজাকাররা সকলে মিলিয়া ‘এক’ হইয়া যাইবে। সেই সময় নির্বাচনের বিবিধ সমস্যা মোকাবিলা করিতে করিতে এই রাজাকারদের ষড়যন্ত্র সামলানো সহজ হইবে কি?  

আমরা দেখিতেছি, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলির কেবল দলীয় পদ-পদবি দখল করাই নহে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রেই বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মারিয়া রহিয়াছে রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদর, আলশামসের পোষ্য ও দোসররা। ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে এই সকল স্বাধীনতাবিরোধী প্রশাসন ও রাজনীতির ময়দানে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙাইয়া হেন অপরাধ নাই যাহা করিতেছে না! এখনই তাহার কিছু কিছু আলামত দেখা যাইতেছে। অনুপ্রবেশকারীদের বিভিন্ন অপকর্মের ‘বহর’ দিনদিন বাড়িতেছে, ক্ষুণ্ন হইতেছে ঐতিহ্যবাহী দলের ভাবমূর্তি। সেই সকল খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিতও হইতেছে। এই চিত্র সমগ্র দেশেরই। দেশের যে কোনো একটি জেলার হিসাব লইলেই এই সত্য স্পষ্ট হইবে। দেখা যাইবে, সর্বত্রই নব্য রাজাকার-আলবদর মতাদর্শের অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্য। তাহাদের দৌরাত্ম্যে দলগুলির প্রকৃত কর্মীরা আরো কোণঠাসা হইয়া পড়িতেছে। আমরা এমনও দেখিতে পাই যে, আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গের কেহ অনুপ্রবেশকারী সম্পর্কে মঞ্চে দাঁড়াইয়া জাতিকে সচেতন করিতেছেন, অথচ তাহার পাশেই অনুপ্রবেশকারী দাঁড়াইয়া হাতে তালি দিয়া চলিয়াছেন! কী নিষ্ঠুর পরিহাস! 

কীভাবে তাহারা প্রবেশ করিতেছে, কীভাবে তাহারা পদ-পদবি পাইতেছে—তাহা দলের শীর্ষ নেতাদের অজানা নহে; কিন্তু প্রশ্ন হইল, এই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর এবং তাহাদের পরবর্তী প্রজন্মের এহেন ‘ক্ষমতায়ন’-এর ফলে দলের রাজনীতি ভয়ংকরভাবে কলুষিত হইতেছে এবং দেশের আদর্শিক রাজনীতি যে ভেজালযুক্ত হইয়া পড়িতেছে, তাহার দায় কে লইবে? এই পরিস্থিতি হইতে উত্তরণের উপায় কী, তাহা আমাদের জানা নাই। তাহার কারণ, বেড়ায় যদি খেত খাইয়া ফালায় তাহা হইলে করণীয় আর কিছু থাকিবে না! এই সকল অন্যায়-অনিয়মের সকল দায়ভার গিয়া বর্তায় যিনি প্রধান নির্বাহী থাকেন, তাহার উপর। ইহা সকলেই জানে এবং বোঝে যে, ক্ষমতার পালাবদল হইলেই এই অনুপ্রবেশকারীরা যেইভাবে ঢুকিয়া পড়িয়াছিল, ঠিক সেইভাবেই সন্তর্পণে উধাও হইয়া যাইবে। তাহারা একটি ‘মিশন’ লইয়া অগ্রসর হইতেছে। ‘মিশন’ সফল হইলেই তাহারা স্বরূপে ফিরিয়া আসিবে। 

আমরা বলিতে পারিব না—রাজাকাররা যেইভাবে সুচ হইয়া অনুপ্রবেশ করিয়া ‘মিশন’ সফল করিবার লক্ষ্যে অগ্রসর হইতেছে—তাহাদের প্রতিহত করিবার মতো ‘সময়’ এখন হাতে রহিয়াছে কি না। দুঃখজনকভাবে, স্বাধীনতার পর যতগুলি রাজনৈতিক দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে, সেইখান হইতে কোনো দল শিক্ষা গ্রহণ করে নাই। নূতন কোনো দুর্ঘটনা যাহাতে না ঘটে, এখনো যেইটুকু সময় আছে, সেই সময়টুকু কাজে লাগানো আশু কর্তব্য।

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন