শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিদিশার বিরুদ্ধে মামলা, ব্যাখ্যা দিতে গাইবান্ধায় সংবাদ সম্মেলন

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪০

অপহরণ, নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে ব্যাখা দিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক।

বৃহস্পতিবার রাতে গাইবান্ধা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারী আতিকুর রহমানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরেন তিনি।

বিদিশা বলেন, আতিকুর রহমান আমার পিএস-এপিএস এরকম কিছুই ছিলেন না। তিনি আমার গাড়িচালকের ভাগ্নের পরিচয়ে আমার ঢাকার রেস্টুরেন্টে কাজ নেয়। সেখানে থালাবাসন পরিষ্কার করত। মূলত তিনি আমার রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ছিলেন। এক পর্যায়ে তাকে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের দায়িত্ব দেই। পরে তাকে ড্রাইভিং শিখিয়ে গাড়ি চালানোরও দায়িত্ব দেই। তিনি দীর্ঘদিন আমার গাড়ি চালিয়েছে। এক সময় আতিকুর গাইবান্ধায় একটি ইটভাটা নির্মাণ করার জন্য প্রস্তাব দিলে আমি ওই প্রস্তাবে রাজি হই এবং তাকে ছয় কোটি টাকা দেই।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ টাকার মধ্যে আমার এফডিআর, ঋণ ও অন্যোর কাছে ধার নেওয়া টাকা রয়েছে। আমার মালিকানায় ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়। এটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আরেকটি বড় ভুল।

বিদিশা বলেন, ওকে আমি ওমরা হজ করতেও নিয়ে যাই। সে কাবা শরীফ ছুঁয়ে আমাকে কথা দেয় ‘ম্যাডাম আপনার সঙ্গে জীবনে বেঈমানি করব না। আপনার টাকা তছরুপ করব না।

তিনি বলেন, আতিকুরের সঙ্গে তার লিখিত চুক্তি ছিল প্রতিমাসে তাকে [বিদিশাকে] লভ্যাংশের টাকা দেবেন। এরপর ইটভাটা চালু হলে আতিকুর প্রথম এক বছর লভ্যাংশের কিছু টাকা দিয়েছেন। এ পর্যন্ত সে আমাকে লভ্যাংশের তিন কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু হিসাব করে দেখা যায় আমি তার কাছে আসল ও লভ্যাংশ মিলে আরও ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পাওনা আছি। এরপর আতিকুর আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরি করেন বিদিশার সঙ্গে। মোবাইল ফোন নম্বর পরিবর্তন করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার পরিবারও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি তালবাহনা করতে থাকায় আমি দুঃশ্চিন্তায় পড়ি। তখন আমি বাধ্য হয়ে গাইবান্ধায় আসি এবং আমার ইটভাটায় যাই।

‘তারপর বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য সেখানে তাকে ডেকে নেই। কিন্তু তখন আতিকুর আমাকে বলে ‘চুক্তিপত্র ঢাকায় হয়েছে, তাই ইট ভাটায় আলাপ না করে চলেন ঢাকায় আপনার বাসায় যাই’। তাই তিনি আমার সঙ্গে ঢাকায় যান। পরে টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তিনি তার ভাই বাবাকে ঢাকায় ডেকে নেন।’

বিদিশা বলেন, আতিকুর রহমান তাকে অপহরণ, ১০ দিন ঢাকার বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে নাটক সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও সংবাদ সম্মেলন করে। টাকা না দিতে তিনি এই মিথ্যা নাটক সাজাচ্ছেন।

বিদিশার অভিযোগের প্রসঙ্গে অভিযুক্ত আতিকুর রহমান বলেন, ম্যাডামের অভিযোগগুলো সঠিক নয়।

২৮ মার্চ অপহরণ ও ১০দিন ঢাকার বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন এবং অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার অভিযোগে বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা আমলী আদালতে (সদর) মামলা করেন বিদিশার কর্মচারী পরিচয়দানকারী আতিকুর রহমান। মামলায়  আরও তিন জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে গাইবান্ধা ডিবি (গোয়েন্দা শাখা) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি মোখলেছুর রহমান জানান, আদালত থেকে তদন্তের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে শুনেছি। তবে আদালত থেকে লিখিত কোন নির্দেশনা মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পাইনি।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে গাইবান্ধা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আতিকুর রহমান।

লিখিত বক্তব্য ও সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, আর্থিক সংকটের কারণে আমার মালিকানাধীন একটি ইটভাটা ভাড়া দেই। ২০১০ সালে বিদিশা সিদ্দিকের মালিকানাধীন ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিই। ২০১৬ সালের শেষের দিকে বিদিশা সিদ্দিক আমার ইটভাটায় টাকা লগ্নি করেন। বিদিশা সিদ্দিক ইটভাটা চালু করতে প্রথম পর্যায়ে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা ধার প্রদানে রাজি হন। কিন্তু দেন চার কোটি ২১ লাখ।

৬০ মাস মেয়াদী সুদাসলে প্রতিমাসে আট লাখ ৭০ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে আতিকুর রহমান ওই সময় পাঁচ কোটি ২২ লাখ টাকার চেক বিদিশা সিদ্দিককে দেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঋণের চার কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা আতিকুর রহমান বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে বিদিশা সিদ্দিকের নির্দেশে বিদিশা ফাউন্ডেশনে জমা দেন বলে সম্মেলনে উল্লেথ করেন।

ইত্তেফাক/আরএজে