চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে প্রভাষক পদে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সৈয়দ মুসা কাজিম নুরীর বিরুদ্ধে যোগদান প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ রেখে শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যোগদানের মাস না যেতেই শিক্ষা ছুটিতে ফিনল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন এই শিক্ষক। অথচ যোগদানের শর্তানুযায়ী বর্তমান গবেষণা/কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মূল ছাড়পত্র জমা দেননি। বিভাগ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতা বলে ছুটি নেন ওই শিক্ষক।
জানা যায়, চবির ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক সৈয়দ মুসা কাজিম নুরী যোগদানের ১২ তম দিনে ১ বছরের জন্য পিএইচডি শিক্ষা ছুটির আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি জরুরি সভা ডাকে। গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত সভায় নিয়োগ পত্রের শর্ত পূরণ না করায় তার শিক্ষা ছুটির আবেদন বিবেচনা না করার সুপারিশ করা হয়। এরপর বিভাগের সভাপতি বরাবর ২৩ মার্চ ওই শিক্ষক ৯০ দিনের শিক্ষা ছুটি চেয়ে পুনরায় আবেদন করেন। কিন্তু বিভাগ কোনো সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে ছুটি নেন ওই শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমেদ বলেন, ওই শিক্ষক তার ডিগ্রি শেষ করার জন্য ৩ মাস ছুটি চেয়েছেন। বিশেষ বিবেচনায় তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে এমন ছুটি দিতে পারে।
সৈয়দ নূরী বলেন, সবকিছু সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমি বেশি কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়ে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।
ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি ছুটির আবেদন করেন বৃহস্পতিবার। এরপর ৩ দিন বন্ধ ছিল। বিভাগ সিদ্ধান্ত জানানোর পূর্বেই রেজিস্ট্রার অফিস থেকে তার ছুটি মঞ্জুরের অনুলিপি বিভাগে আসে। এরমধ্যে আমরা মিটিং ডাকারও সুযোগ পাইনি।
নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন না বিশেষজ্ঞ শিক্ষক
ক্রিমিনোলজি বিভাগের এ নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ছিল আগে থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সদস্য রাখতে হয়। কিন্তু এ বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে এ বিভাগের কোনো বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ছিলেন না। প্ল্যানিং কমিটি থেকে সিলেকশন বোর্ডের সদস্যের জন্য যে ৪ জনকে সুপারিশ করা হয়েছিল, তাদের একজনকেও রাখা হয়নি নিয়োগ বোর্ডে। তাছাড়া প্রভাষক পদে ২ জনের বিপরীতে ৩ জনকে সুপারিশ করে নিয়োগ বোর্ড।
জানা যায়, গত ২ মার্চ ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ৩ সদস্যের বোর্ড বসে। ওই বোর্ডে পদাধিকারবলে সদস্য ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার। বোর্ডের অপর ২ সদস্য হলেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন। এদের কেউই এই বিভাগের শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞ নন।
ওই বোর্ড থেকে প্রভাষক পদে সুপারিশ করা হয় ফারজানা রহমান, প্রকাশ চন্দ্র রায় ও সৈয়দ মুসা কাজিম নূরীকে৷ বোর্ডের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সবচেয়ে কম সিজিপিএধারী ছিলেন সৈয়দ মুসা কাজীম নূরী। তারপরও নিয়োগ বোর্ড তার নাম সুপারিশ করে। পাশাপাশি তিনি অন্যদের তুলনায় সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। বর্তমান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যানেরও ৫ বছরের সিনিয়র।
বোর্ডের সদস্য ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন বলেন, ক্রিমিনোলজি ও সমাজতত্ত্ব সিস্টার সাব্জেক্ট। সমাজতত্ত্ব থেকেই ক্রিমিনোলজির সৃষ্টি। যারা অপরাধবিজ্ঞানী তারা সবাই সমাজবিজ্ঞানী। এক্ষেত্রে ক্রিমিনোলজির বিশেষজ্ঞ হিসেবে সমাজতত্ত্বের একজন থাকতেই পারেন। কাজীম নুরীকে যোগ্য মনে হয়েছে বিধায় তাকে সুপারিশ করা হয়েছে।