মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ঈদুল ফিতরের অঙ্গীকার

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৩০

মাহে রমজানে এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের নূতন চাঁদ মুসলমানদের মধ্যে লইয়া আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ। পবিত্র ঈদুল ফিতর। রোজাদার যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা ও মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, তাহার গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখিবার শপথ গ্রহণের দিন হিসাবে আসে ঈদুল ফিতর। ধনী-গরিব সকলেই মিলিয়া এক কাতারে শামিল হইয়া ঈদগাহে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য দুই রাকায়াত নামাজ আদায় করেন। বছর জুড়িয়া নানা প্রতিকূলতা, দুঃখ-বেদনা সকল কিছু ভুলিয়া ঈদের দিন মানুষ সকলের সহিত ঘনিষ্ঠভাবে সম্মিলিত হন। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে সকলকে। এই ঈদ তাই এক নির্মল আনন্দের ফল্গুধারা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল শনিবার কিংবা পরের দিন রবিবার আমাদের দেশে অনুষ্ঠিত হইবে এই মহোত্সব।

আমাদের দেশে ঈদের আনন্দ সকলের সহিত ভাগাভাগি করিয়া নিতে পথের বিড়ম্বনা অগ্রাহ্য করিয়া অনেকেই ছুটিয়া চলেন স্বজনের নিকট। এবার ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা ছাড়িতেছে ১ কোটিরও অধিক মানুষ। আসলে ঈদ শব্দটির আরবি শব্দমূল ‘আউদ’। ইহার অর্থ যাহা ফিরিয়া ফিরিয়া বারংবার আসে বা প্রচলিত অর্থে খুশি বা আনন্দ। আর ফিতর শব্দের অর্থ ভাঙিয়া দেওয়া। তাই ঈদুল ফিতর মানে রমজানের দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম ভাঙিবার এক আনন্দঘন উৎসব। নৈতিক, আত্মিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির সীমানা অতিক্রম করিয়া সামষ্টিক কল্যাণ লইয়া আসে ঈদুল ফিতর। তাকওয়া বা খোদাভীতির শক্তিতে বলীয়ান হইয়া নূতন জীবনে ফিরিয়া আসিবার অঙ্গীকার লইয়া আসে এই ঈদ। ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদের এই দিনটি পুরস্কার দিবস হিসাবে গণ্য। রোজা রাখিবার পুরস্কার আল্লাহ নিজেই দিবেন বলিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। তাই ঈদের দিন এই মহাপুরস্কার তথা ক্ষমা লাভের সুযোগ তৈরি হওয়ায় এক অন্যরকম ভাবাবেগ তৈরি হয় মুমিন মুসলমানদের নিকট। যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন যাহারা রোজা পালন করিয়াছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাহাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের নিকট গৌরব করিয়া বলেন, ‘হে আমার ফেরেশতাগণ, তোমরা বলো তো, যে শ্রমিক তাহার কাজ পুরোপুরি সম্পাদন করে, তাহার প্রাপ্য কী হওয়া উচিত? উত্তরে ফেরেশতাগণ বলিবেন, ‘হে মাবুদ পুরোপুরি পারিশ্রমিকই তাহার প্রাপ্য।’ এই জন্য এই দিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রার্থনায় সাড়া দিবেন। আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করিয়া দিবেন। এমনকি সাধারণ পাপরাশিকে পুণ্যে পরিণত করিয়া দিবেন। ইহার চাইতে আধ্যাত্মিক আনন্দের খবর আর কী হইতে পারে? এই জন্য ফেরেশতাগণ ঈদের দিন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়াইয়া থাকিয়া রোজাদার ব্যক্তিদের দ্রুত আল্লাহর দিকে ধাবিত হইতে বলিবেন। তাই আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক ঘোষিত এই পুরস্কার প্রত্যাশায় এই ঈদ অধিক মহিমান্বিত ও আনন্দঘন হইয়া উঠে। সিয়াম সাধনা, ইফতার-সেহরি গ্রহণ, তারাবিহ ও জাকাত-ফিতরা আদায়, ইতিকাফ ও লাইলাতুল কদর উদযাপন ইত্যাদির মাধ্যমে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত হইয়া অনাবিল আনন্দ লাভের মধ্যেই ঈদুল ফিতরের বিশেষ সওগাত নিহিত। বলা বাহুল্য, এই জন্যই অন্য যে কোনো আনন্দ-উৎসব ও ঈদের আনন্দ উৎসবের মধ্যে রহিয়াছে মৌলিক পার্থক্য। আত্মার আনন্দই এইখানে বড় কথা। তাই ঈদুল ফিতরের উৎসব বাস্তবিক শুভময়তা ও পারলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশায় ঋদ্ধ।

পবিত্র ঈদুল ফিতর ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সকল স্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করিবার প্রয়াস পায় এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়। আমাদের জাতীয় জীবনে এই সকল শিক্ষা ও অঙ্গীকারের অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন। ইহা ছাড়া পৃথিবীব্যাপী যেইভাবে যুদ্ধবিগ্রহ, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও অশান্তি বাড়িয়া গিয়াছে, তাহাতে ঈদের শিক্ষা লইয়া আমরা বিশ্বকে বসবাস উপযোগী করিতে সচেষ্ট হইতে পারি। এই জন্য আমাদের আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দের বন্ধন দৃঢ় করিতে হইবে। আমাদের আগামী দিনগুলি আরও সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হউক। হাসিখুশি ও ঈদের আনন্দে ভরিয়া উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে সংযম, ধৈর্য, ঐক্য ও প্রেমপ্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক। ইহাই হউক ঈদুল ফিতর উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সকলকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন