‘মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য।’ কথাটি জীবনে অনেকবার শুনেছি। অন্যদিকে শুনেছি অসহায়ের আর্তনাদ, হাহাকার। যে হাহাকারে ঘরে থাকতে পারেন না সবাই। বেরিয়ে আসেন মানবিকতার টানে। সেই দলের একজন সাইফুল ইসলাম সুজন। কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নে যার বাড়ি। কিন্তু বাড়িতে থাকার সময় যে নেই তার!
পেশায় শিক্ষক। নেশায় মানবসেবার অদম্য কান্ডারি। ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ সামিটের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর সুজনকে মাঝরাতে কল দিলেও হাসিমুখে ছুটে যান অন্যের বিপদে। করোনার দুর্দিনে রক্তযোদ্ধা হিসেবে নির্ভয়ে কাজ করেছেন। রক্তদান করেছেন, রক্ত সংগ্রহ করেছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে গেছেন করোনা আক্রান্তের দুয়ারে। কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছেন। কারও পড়ার জন্য বই নেই, গাইড নেই, তিনি ছুটে যান। খুব সামর্থ্যবান নন নিজে, তবু থেমে নেই প্রচেষ্টা। সংগ্রহ করে তুলে দেন গরীব শিক্ষার্থীদের হাতে। এলাকায় সাঁকো ভেঙে গেছে, সুজন হাজির। তরুণদের নিয়ে শ্রম দিয়ে মেরামত করে দেন নিজ উদ্যোগে। সামাজিক সচেতনতা, পরিবেশ উন্নয়নেও কাজ করছেন নিরলস। কারণ তিনি চান সুন্দর একটি সমাজ গড়তে।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটির হয়ে স্বেচ্ছাসেবার কাজ করছেন। কাজ করতে গিয়ে নানা জনের বাঁকা কথা হজম করতে হয়। তবুও তাকে যারা ভালোবাসে তাদের জন্য কাজ করে যেতে চান। বাঁচতে চান মানুষের জন্য।
শিক্ষকতা করছেন নিজ উপজেলার একটি কিন্ডারগার্টেনে। যে বিদ্যালয়টিতে মানবিকতার বিকাশ ঘটান সুজন। কচিকাঁচা বিদ্যানিকেতনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অভিনব সব উদ্যোগ গ্রহণ করে পাড়া-গাঁয়ের বিদ্যালয়টিকে গড়ে তুলেছেন রোল মডেল হিসেবে। এতে গ্রামের অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। শিশুরাও আনন্দিত মনে পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে তাদের প্রিয় সুজন স্যার আছে বলে। স্বীকৃতিও পেয়েছেন নিজ কাজের। ইন্টারন্যাশনাল লিডার সামিট অ্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এ ‘বেস্ট টিচার ফর ইনোভেশন ইন টিচিং’ ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন সেরার সম্মাননা। সুজন বলেন, ‘আমি মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। কী পেলাম, না পেলাম তা নিয়ে কখনো ভাবি না।’