মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ঐতিহাসিক ডোপ্পা দিবস

উইঘুর মুসলিমদের সমর্থনে বাংলাদেশে প্রতিবাদ

আপডেট : ০৫ মে ২০২৩, ১৪:৩৬

ঐতিহাসিক ডোপ্পা দিবস উপলক্ষে ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের খেলাফত আন্দোলন পৃথকভাবে প্রতিবাদ সভা এবং মানববন্ধন করেছে। উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা নির্যাতনের প্রতিবাদস্বরূপ শুক্রবার (৫ মে) ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ।

ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসানের সভাপতিত্বে আলোচনা ও প্রতিবাদ সভার প্রধান অতিথি ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের আমীর-ই-শরীয়ত মাওলানা আবু জাফর কাসেমী।

প্রধান অতিথি বলেন, চীন বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘৃণ্য কাজ করে যাচ্ছে, তবুও সারা বিশ্ব এ ব্যাপারে চুপ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চীনের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। শুধুমাত্র মুসলমানদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে বলেই কি চীন বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে?

এ সময় খায়রুল আহসান বলেন, চীনের স্বৈরশাসক উইঘুর নাগরিকদের রক্ত দিয়ে তার আসন পাকাপোক্ত করেছেন। তবে সারা বিশ্বের এখন জেগে ওঠার সময় এসেছে। জাতিসংঘ বিল পাসের মাধ্যমে উইঘুরদের নিজেদের স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে।

এভাবেই উইঘুরদের স্বাধীনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ এবং চীনের ঘৃণ্য কাজের নিন্দা জানিয়ে শেষ হয় আলোচনা ও প্রতিবাদ সভা।

অন্যদিকে, ডোপ্পা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এ সময় বক্তারা চীনের সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিক চিন্তাচেতনা, সারাবিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের নীতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানান। পূর্ব তুর্কিস্তান (জিনজিয়াং) প্রদেশের উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীনের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে নিন্দা জানান বক্তারা।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি বক্তারা দাবি জানান, উইঘুরদের স্বাধীনতা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। মানববন্ধনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি লিখিত ইশতেহারও জারি করা হয়।

উল্লেখ্য, চীনের দখলকৃত মুসলিম দেশ পূর্ব তুর্কিস্তানের অধিবাসী উইঘুরদের মাথার টুপি ও সংগ্রামের প্রতীক এই ডোপ্পা। ১৯৪৯ সালে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র পূর্ব তুর্কিস্তানকে ক্ষমতা দেখিয়ে জোর করে নিজের দখলে আনে চীন। প্রায় ৭২ বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষদের প্রতি অমানবিক আচরণ করে যাচ্ছে দেশটি। খুন, গুম, কারাবন্দিসহ নানা উপায়ে উইঘুরদের প্রতিহত করে পূর্ব তুর্কিস্তানকে নিজেদের হাতের মুঠোয় রাখছে চীন।

উইঘুর নারীদের ওপর চলছে চীনের সামরিক বাহিনির অত্যাচার। তাদের জোরপূর্বক গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্বকরণ করানোর মতো গুরুতর ঘটনাও ঘটছে। তাছাড়া উইঘুর শিশুদের জোরপূর্বক তাদের মা-বাবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়। শিক্ষার নাম করে তাদের ছোটবেলা থেকেই নিজের ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য থেকে দূরে রেখে তাদের মনে চীনা সংস্কৃতির বীজ বপন করা হয়। উইঘুরদের বাড়িঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে তাদের সর্বক্ষণ নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে। শিক্ষা প্রদানের নাম করে ৩৯টি কারাগার নির্মাণ করে প্রায় ২০ লাখ উইঘুর নাগরিকদেরকে সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বন্দিদের ওপর শারীরিক, মানসিক অত্যাচার চালানো এবং নারীদেরকে নিজেদের যৌন লিপ্সা মেটাতে ব্যবহার করাটাই এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনের কাছে।

সম্প্রতি এসব বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে চীনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করে জাতিসংঘ। উইঘুরদের ওপর অত্যাচারের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে জাতিসংঘ এবং এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার সেখানে পরিদর্শনে যেতে চাইলেও চীনা সরকার প্রতিবার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তাছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নাম করে চীন সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। চীনের উন্নয়ন প্রকল্পের জেরে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ভিন্ন মতাদর্শের নাগরিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য বেআইনি পুলিশ স্টেশন স্থাপন করেছে চীন।

ইত্তেফাক/এসকে