মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

যেভাবে রমজানের কাজা রোজা আদায় করবেন

আপডেট : ১২ মে ২০২৩, ১০:০৬

এইতো পবিত্র রমজান মাস আমাদের থেকে চলে গেল। রমজানের রোজা রাখা ফরজ। রমজানের রোজা কোন কোন অবস্থায় কাজা করা যায়, আবার কাজা কখন, কীভাবে আদায় করতে হয় এ সম্পর্কে আমরা অনেকে তেমন কিছুই জানি না। বিভিন্ন অপারগতা কিংবা অজুহাতে (ওজর) রমজানের রোজা কাজা করা হয়। তবে সেই কাজা রোজাগুলো পরবর্তী সময়ে আদায় করে নিতে হয়। না হলে ফরজ আমল ত্যাগের গুনাহ হবে।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, যেসব ওজর ও অপারগতার কারণে রোজা কাজা করা যায়। মনে রাখতে হবে, এসব রোজা মাফ হওয়ার নয়। তাই অপারগতা দূর হয়ে যাওয়ার পর সেটার কাজা আদায় করা ফরজ। অবশ্যই এক রমজানের রোজার কাজা পরবর্তী রমজানের আগেই পূরণ করতে হবে।

যেসব রোজার শুধু কাজা আদায় করতে হবে : মুসাফির অবস্থায়, রোগব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে, মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে, এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে, শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে, কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে, মহিলাদের মাসিক হায়েজ ও নেফাস চলা অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করা হলে। এছাড়াও রোজা ভঙ্গের আরো যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয়, তাহলো—স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে, পাথরের কণা, লোহার টুকরা, ফলের বিচি গিলে ফেললে, ডুশ গ্রহণ করলে, সামান্য পরিমাণ কোনো খাবার খেলে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে বা মনের ভুলে খেলে রোজা ভাঙবে না। মনে আসা মাত্রই খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। নাকে বা কানে ওষুধ দিলে যদি তা পেট পর্যন্ত পৌঁছে, মাথার ক্ষতস্থানে ওষুধ দেওয়ার পর তা যদি মস্তিষ্কে বা পেটে পৌঁছে ইত্যাদি কারণে রমজানের রোজার শুধু কাজা আদায় করতে হবে, কাফফারা আদায় করতে হবে না।

যেসব কারণে রোজার কাজা ও কাফফারা উভয়ই আবশ্যক : রমজানের রোজা রেখে দিনের বেলা স্ত্রী মিলনে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর সেই রোজার কাজা-কাফফারা ওয়াজিব হয়। (বুখারি: ৬৭০৯)। রোজা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হয়। (আল বাহরুর রায়েক:২/২৭৬)। বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোজা ভেঙে যায়। কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (রদ্দুল মুহতার: ৩/৩৮৫)। আর সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও আজান শোনা যায়নি বা এখনো ভালোভাবে আলো ছাড়ায়নি, এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে পানাহার করলে বা স্ত্রী মিলনে লিপ্ত হলে কাজা ও কাফফারা দুটিই জরুরি হবে। (মাআরিফুল কুরআন: ১/৪৫৪)।

রোজার কাজা : শরিয়তে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি, অর্থাত্ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট।

রোজার কাফফারা : কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে। ১. একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা আদায়ের সময় ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোনো একটি ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ২. যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খাবার দেবে। অন্যদিকে কেউ অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা পেটভরে খাবার খাওয়াতে হবে। ৩. গোলাম বা দাসী মুক্ত করতে হবে ইত্যাদি।

অতএব রমজানের রোজা একটি ফরজ ইবাদত। তাই সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী রোজার কাজা আদায় করতে হবে। আর যেসব ছোটখাটো কিছু ভুল থেকে শুরু করে বড় বড় কিছু কাজের কারণে রোজা মাকরুহ হয়ে যায় ও তার পবিত্রতাও নষ্ট হয়, সেগুলো থেকে আমরা ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ সচেতনতার সঙ্গে বিরত থাকার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

লেখক: আলেম ও প্রাবন্ধিক

ইত্তেফাক/এসকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন