বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না মেঘনা-তেতুঁলিয়া উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ

আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ১৮:২১

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় ভোলার বোরহানউদ্দিনের মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীর তীরবর্তী ৫ ইউনিয়নের মানুষ আতঙ্কিত থাকলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না। বিশেষ করে মেঘনা বেড়িবাঁধের বাইরে ৪টি ইউনিয়নের ১১টি ওয়ার্ডে বসবাসকারী প্রায় ১৪ হাজার মানুষ বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। 

শনিবার সকাল থেকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জানিয়ে সতর্ক করে উপজেলার সর্বত্র সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, সারা বছর এই এলাকার মানুষ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে নদী ও সাগরে গিয়ে মাছ ধরেন। এখন ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় তারা উপকূলে বাড়িতে নিরাপদে রয়েছেন তাই আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে তেমন লাভ নেই। তাছাড়া সেখানে গিয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হবে মনে করছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ৯ ইউনিয়নে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সচেতনতামূলক প্রচারণা, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির মাইকিং করে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বার বার বলার পরও অনেক এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পারেনি। প্রশাসন সব ধরণের প্রস্তুতি নিলেও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখনও খালি পড়ে আছে। শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়লেও কোনোভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ণে যেতে চাচ্ছেন না স্থানীয়রা। 

বড় মানিকা, টবগী, হাসান নগর, গংগাপুর ও পক্ষিয়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, তাদের এলাকার প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মেঘনা-তেতুঁলিয়ার তীরে বাস করে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ বেড়িবাঁধের বাইরে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও তার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না। এছাড়া শনিবার রাতে কিছুলোক শনিবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও রোববার সকালে চলে আসে।

হাসাননগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ৬৫ বছর বয়সে কত ঘূর্ণিঝড় দেখেছি, এসবে আমরা ভয় পাই না। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে, ঘরে তো কিছু থাকবে না। সব লুট হয়ে যাবে। 

মেঘনার তীরবর্তী এলাকার কয়েকজন নারী বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীদের থাকার জন্য তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা নেই, তাই ঘরেই ভালো। পানি না ওঠা পর্যন্ত বাড়িতে আছি।

মির্জাকালু সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুরন্নবী বলেন, এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্রে একজন লোক আসেনি।মারাত্মক পরিস্থিতি না হলে এখনকার লোকজন আসবে না।
 
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপজেলা টিমলিডার শাহজাহান হাওলাদার বলেন, সর্বত্র সিপিপির সদস্যরা কাজ করছেন। প্রতিটি এলাকায় সিপিপির সদস্যরা জনগণকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সর্তক করে জানমাল ও গবাদিপশুর নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আবহাওয়া তেমন খারাপ না হওয়ায় ও মেঘনা স্বাভাবিক থাকায় লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদেরকে দূর্যোগকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

সিপিপি সহকারী পরিচালক মো. মেজবাউর রহমান বলেন, এখনাকার মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করে না।তাছাড়া আবহাওয়া অস্বাভাবিক হলে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সোহেল হোসেন বলেন, ১৬০ টি সাইক্লোন সেন্টার ও ১ হাজার ২৬০ জন স্বেচ্ছাসেবীক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের দিক পরিবর্তন করা ও আবহাওয়া তেমন খারাপ না হওয়ায় হয়তো তারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠছেন না। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।  একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপি এবং গ্রাম পুলিশের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন।

ইত্তেফাক/এবি/পিও