শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে ভাগ্য বদল করছেন চাষিরা

আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ১৭:৫০

পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক একটি কৃষি প্রযুক্তি হচ্ছে মালচিং পদ্ধতি। তাই অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। দ্বিগুণ ফলন ও ভালো বাজার দরে সবজি বিক্রি করে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অনেক সবজি চাষি লাভবান হয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। 

জানা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে প্রথমে জমিতে পরিমিত রাসায়নিক ও জৈব সার দিয়ে সারি সারি বেড তৈরি করা হয়। পরে সারিবদ্ধ বেডগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের পর শুধু দেখভাল করা ছাড়া তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। মালচিং পেপার দ্বারা ঢেকে দেওয়ার কারণে ছত্রাক বা রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয় না বললেই চলে। জমির পরিচর্যার জন্য তেমন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ হয় খুব কম। এই পদ্ধতিতে ফলন হয় দ্বিগুণ। পরিশ্রম কম হয়। এ পদ্ধতি অনেক সহজলভ্য লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব। 

উপজেলার বালিসিতা গ্রামের কৃষক শামসুদ্দিন বলেন, ইউটিউব দেখে ও কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ৪০ শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল মেসি ও তামিম জাতের শসা চাষ করেন। জমি প্রস্তুত থেকে রোপণ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে চারা রোপণ করার ২১ দিন পর শসার ফলন শুরু হয়। তিন ধাপে জমি থেকে ৩০০ মণ শসা উত্তোলন করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। এতে লাভ হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। আশানুরূপ ফলন ও বাজার দরও ভালো পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, তার এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে পাশের তারাকান্দি গ্রামের কৃষক বাবু মিয়াও মালচিং পদ্ধতিতে ৪০ শতক জমিতে শসা চাষের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে ২০ শতক জমিতে শসার চারা রোপণ করেছেন। 

মাইজবাগ এলাকার চাষি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে তৎকালীন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা সর্বপ্রথম মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তখন থেকেই এ প্রযুক্তিতে সবজি চাষ করছি। এবার ১ একর জমিতে সুগার কুইন জাতের তরমুজ চাষ করেছি। ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে তরমুজগুলো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করবো। 

এওয়াজ নগর গ্রামের চাষি ইব্রাহিম বলেন, ২০ শতক জমিতে পার্পল কিং জাতের বেগুন চাষ করেছেন। আবাদ করতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বেগুন ১০ মাস ফলন দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি হবে।

কৃষক আমান উল্লাহ বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে কম সময়ে অল্প খরচে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বলেন, সংশ্লিষ্ট চাষির জমিতে যেন পোকামাকড়ের আক্রমণ না হয় সেজন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, উপজেলার প্রায় ৫-৭ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে। দিন দিন এই পদ্ধতি পুরো উপজেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। এটি একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও লাভজনক পদ্ধতি। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি চাষ করলে জমিতে একবার সেচ ও সার দিলেই চলে। বার বার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আগাছা কম হয়। নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত ফসল বেঁচে থাকে এবং ফলন দেয়। যেকোনো ব্যক্তি এ প্রযুক্তিতে সবজি চাষ করে অল্প সময়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

ইত্তেফাক/এবি/পিও