শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ

আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ১৯:৫৯

ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির মাসুল রাশিয়াকে দিতে হবে-এমন ভাবনা নিয়ে ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ' এক রেজিস্টার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিদেশে রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। এক প্রতিবেদন এমনটি জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলি সবার আগে যে জোট গঠন করেছিল, তার নাম ছিল ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ'। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তখনো স্বপ্নের পর্যায়েও ছিল না। আজ  সেই পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৪৬। ইউক্রেনের উপর হামলার কারণে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বেলারুশের সদস্যপদ আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই নিয়ে চার বার ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ'-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।

১৮ বছর পর আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকইয়াভিকে শীর্ষ নেতারা মিলিত হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি ও তথ্যপ্রমাণ  নথিভুক্ত করতে এক ‘রেজিস্টার অফ ড্যামেজ' সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার হামলার শুরু থেকে ইউক্রেনে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলি নথিভুক্ত করে ভবিষ্যতে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে সেই তালিকা কাজে লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের এক প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ'-এর মহাসচিব মারিয়া পেইসিনোভিচ এই রেজিস্টার গঠনের সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক' হিসেবে বর্ণনা করেন।

৪৬ সদস্যের মধ্যে ৪০টি দেশ সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। শুধু আর্মেনিয়া, আজেরবাইজান, বসনিয়া-হ্যারৎসোগোভিনা, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি ও তুরস্ক আপাতত সেই উদ্যোগে শামিল হচ্ছে না। ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ' এই উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ক্যানাডা, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করেছে। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে আপাতত তিন বছরের জন্য ‘ড্যামেজ রেজিস্ট্রি' দফতর কাজ করবে। ইউক্রেনেও এক ‘ফিল্ড অফিস' খোলা হবে। ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ', তাদের সহযোগীসহ যে কোনো দেশ সেই উদ্যোগে অংশ নিতে পারে। তবে রেজিস্টারের অর্থায়নের জন্য তাদের কাছে চাঁদা প্রত্যাশা করা হবে। এই মুহূর্তে শুধু ক্ষয়ক্ষতি নথিভুক্ত করা হলেও ভবিষ্যতে সেই কাঠামোর ক্ষমতা বাড়িয়ে আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক কমিশন ও তহবিল গঠন করার প্রস্তাবও রয়েছে, যদিও সেগুলির কাঠামো এখনো অস্পষ্ট।

রাশিয়া স্বেচ্ছায় ক্ষতিপূরণ না দিলে বিদেশে সে দেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব একাধিকবার শোনা গেছে। কিন্তু আইনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই রেজিস্টার গঠনের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, নৃশংস কার্যকলাপের জন্য রাশিয়াকে দায়বদ্ধ করার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে এটা একটা প্রয়োজনীয় অবদান। তিনি ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ'-এর অর্থায়েনের জন্য জার্মানির নিয়মিত মাসুলের পাশাপাশি এককালীন এক কোটি ইউরো দিচ্ছেন। ইউরোপে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অভিভাবক হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের হাত আরও শক্ত করার অঙ্গীকার করেন জার্মান চ্যান্সেলর। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ভবিষ্যতে ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ', ইইউ এবং ইইউ-তে যোগদানের পদপ্রার্থীদের মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইত্তেফাক/এএইচপি