বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ভারতে কারখানায় বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত ভানুর মৃত্যু

আপডেট : ১৯ মে ২০২৩, ১৮:২৪

ভারতের এগরায় বিস্ফোরণের প্রধান অভিযুক্ত ভানু বাগের মৃত্যু হয়েছে। ওই বিস্ফোরণে ভানুও আহত হয়েছিলেন। কটকেই মৃত্যু হয় তার। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) পুলিশ জানিয়েছিল, ভানুকে কটক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার ছেলে ও ভাইপোও গ্রেপ্তার হয়েছে। 

কটকের হাসপাতালে ভানুর চিকিৎসা হচ্ছিল। সেখানেই স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার দেহ রাজ্যে নিয়ে এসেছে পুলিশ। ভানুর পাশাপাশি তার ছেলে ও ভাইপোও এই বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত। ভাইপোকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। 

ভারতের এগরায় বিস্ফোরণের প্রধান অভিযুক্ত ভানু বাগ মৃত্যু হয়েছে।

ভানুর শেষকৃত্যের পরেও ছেলেকেও নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৬ মে) এগরায় ভানুর বাজি কারখানায় ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়। পুরো কারখানা পুড়ে যায়। ৯ জন মারা যান। মৃতদেহগুলো কারখানা থেকে বেশ কিছুটা দূরে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। এরপরই ভানুর খোঁজ চলতে থাকে। 

বিস্ফোরণের সময় ভানুও কারখানায় ছিলেন। তার দেহ ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। সেই অবস্থায় আত্মীয়রা তাকে বাইকে করে নিয়ে কটকে ভর্তি করান। ভানুর আগে বাড়ি ছিল ওড়িশার বালেশ্বরে। সেখানকার একটি ঠিকানায় আধার কার্ডও ছিল। সেটা দেখিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

গত মঙ্গলবার (১৬ মে) এগরায় ভানুর বাজি কারখানায় ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়।

সেখানে জানানো হয়, রান্নার তদারকি করতে গিয়ে সিলিন্ডার ফেটে এই অবস্থা হয়েছে। তবে এরপরেও একটি হাসপাতাল তার চিকিৎসা করেনি। একটি হাসপাতাল অন্য হাসপাতালে তাকে রেফার করে। তারপর হাসপাতালে চিকিৎসা চলতে থাকে।

ইতিমধ্যে বৃহস্পতিবার সিআইডি ওই হাসপাতালে পৌঁছে যায় এবং ছেলে ও ভাইপোকে ধরে। পরে ভানুর মৃত্যু হয়। ভানুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভানুর কাছে বাজির কারখানার কোনো লাইসেন্স ছিল না। 

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভানুর কাছে বাজির কারখানার কোনো লাইসেন্স ছিল না। 

তা সত্ত্বেও সে দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানাটি চালায়। গ্রামবাসীরা অতীতে অভিযোগ করলেও পুলিশ-প্রশাসন কিছু করেনি। অভিযোগ, ভানু ছিল খুবই প্রভাবশালী। গ্রামবাসীদের অনেকেই ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ভানুর কারখানায় বাজি ছাড়াও বোমা বানানো হতো। 

আর বোমা তৈরি করতে গিয়েই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাও জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের মাত্রা দেখে তাদের মনে হচ্ছে, বোমাই ফেটেছে। গ্রামবাসীরা ভানু বাগের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ডিডাব্লিউয়ের চিত্র সাংবাদিক সত্যজিৎ সাউ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন।  

ভানুর কারখানায় বাজি ছাড়াও বোমা বানানো হতো। 

ভানুর প্রতিবেশী ঝর্না বাগের মতে, ভানু ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু তার পেশাটা ছিল খুব খারাপ। বিস্ফোরণে স্বামীকে হারিয়েছেন সুমা জানা। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, ভানু বাগকে তিনি শাস্তি দিতে চান। সুমা কিছু করার আগেই অবশ্য ভানু না ফেরার দেশে চলে গেছে।

আবার স্ত্রীকে হারানো সঞ্জিত বাগ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে জানিয়েছেন, তার দুইটি ছোট বাচ্চাকে এখন তিনি কীভাবে মানুষ করবেন। এ সবই হয়েছে ভানু বাগের জন্য। স্থানীয় মানুষরাও অভিযোগ করেছেন, কেউ কাজ করতে না চাইলে ভানু হুমকি দিয়ে করাতো।

এগরা কাণ্ডের প্রতিবাদে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে মিছিল বের করেছিল বিজেপি।

তারা অভিযোগ করেছেন, শুধু বাজি কারখানাই নয়, ভানুর একটি ওষুধের কারখানা ছিল। ভানু খাদিকুলে একটি বাড়িতে থাকতেন। তাছাড়াও তার একটি বিলাসবহুল বাড়ি ছিল। বিস্ফোরণে আহত দুইজন এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। 

তাদের কলকাতা নিয়ে আসা হয়েছে। এসএসকেএমে তারা ভর্তি আছেন। এগরা কাণ্ডের প্রতিবাদে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে মিছিল বের করেছিল বিজেপি। তার নেতৃত্বে ছিলেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি। 

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, মিছিলে বোমা মারা হয়। গুলিও চলে। সিআইএসএফ জওয়ানরা গুলি চালান। এতে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। তৃণমূল অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ইত্তেফাক/ডিএস