রোববার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

তবে সাবেক হুকুম বহাল থাকাটাই কি কাম্য নহে?

আপডেট : ২০ মে ২০২৩, ০৬:৩০

উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলিতে একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রহিয়াছেন, যাহারা আমলাতান্ত্রিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করিয়া সকল সময় ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখিতে চাহেন। ইহার উদ্দেশ্য নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা করা। আবার একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতাকর্মীও রহিয়াছেন, যাহারা সেই সকল আমলার সহিত বজায় রাখেন দহরম-মহরম সম্পর্ক। তাহারা যোগসাজশ করিয়া বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাত্ করেন। ফলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে যতটুকু কাজ হওয়ার কথা, তাহা হয় না। আবার যতটুকু কাজ হয়, তাহার মান ঠিক থাকে না। ইহা হইল নিচু স্তরের অনিয়ম ও দুর্নীতি। তবে উঁচু স্তরে যেইভাবে জনগণের অর্থ লোপাট করা হয়, তাহা তাহাদের ভাষায় বলিতে গেলে আরও আকর্ষণীয়। প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে যাহা ধরা হয়, তাহা সম্পন্ন হইবার আগ পর্যন্ত তাহার মেয়াদ যেমন দফায় দফায় বাড়ানো হয়, তেমনি অর্থ বরাদ্দ তিন-চার গুণ বৃদ্ধি পায়। এই বাড়তি অর্থের ভাগবাঁটোয়ারা কীভাবে হয় এবং কত দূর পর্যন্ত যায়, তাহাও এই সকল দেশের সচেতন নাগরিকদের অজানা নহে। উন্নয়নশীল দেশে এইরূপ ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কোনো ধরনের আদেশ-নির্দেশ দিয়া এই পক্ষাঘাতগ্রস্ততা হইতে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব নহে। এই জন্যই দরিদ্র ও উন্নয়নশীল বিশ্বে বারে বারে দেখা যায় অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত। যদি এই সকল শুধরানো না হয়, তাহা হইলে ভোট তথা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নই থাকিবে না। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায় বলিতে হইবে, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’

উপর্যুক্ত কারণেই উন্নয়নশীল দেশে একেকটা সরকার পরিবর্তনের পর অনিয়ম ও দুর্নীতির যেই সকল খবর ছাপা হয়, তাহা লোমহর্ষক। তাহা দেখিয়া দেশপ্রেমিক যে কাহারো শরীর শিহরিত হইয়া উঠে! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হইল, যাহারা এই সকল অনিয়ম-দুর্নীতির কথা উল্লেখ করিয়া ক্ষমতায় আসেন, তাহারা পরবর্তীকালে এমন সকল অপকর্মের সঙ্গে জড়াইয়া পড়েন, যাহাতে দেখা যায় তাহারা পূর্ববর্তী সরকারের সকল অন্যায়-অনিয়মকে ছাড়াইয়া গিয়াছেন। এমনকি তাহাদের চাইতে দশ গুণেরও বেশি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হইয়া পড়িয়াছেন। আমরা আগে বলিতাম ক্ষমতার হাতবদল হয়। কিন্তু এখন দেখি অনেক ক্ষেত্রে তাহাও হয় না। হাত একই থাকে। আমরা দেখিয়া আসিতেছি, এই সকল দেশে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথা বলা হয়। অথচ দেখা যায়, প্রথম দিকে যাহারা এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, সরকার পরিবর্তনের পরও তাহাদের একই কাজে বহাল-তবিয়তে থাকিতে দেখা যায়। নিন্দুকেরা বলেন, অভিজ্ঞতার মূল্য আছে না! এই জন্য এই সকল দেশে সচেতন নাগরিকরা সকল কিছু দেখিয়া-শুনিয়া সেই প্রবাদ বাক্যটি অধিক হারে আওড়াইতে থাকেন—‘যেই লাউ সেই কদু।’ আবার এই প্রবাদটিও এখানে প্রযোজ্য, ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ।’ এই জন্য তাহারা মনে করেন, পরিবর্তনের প্রয়োজন নাই! তাহারা বরং সম্পূরক প্রশ্ন রাখেন, সরকারের উপর স্তরের মাত্র কয়েক জন লোক পরিবর্তনের জন্য হাজার হাজার লোককে কেন জেলে যাইতে হইবে? কেন তাহাদের জীবন দিতে হইবে?

এখন এই ধারার সঙ্গে প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরও সহমত পোষণ করিতে দেখা যায়। সেই কারণে উন্নয়নশীল বিশ্বে দেখা যায়, অনেকে চান স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। তাহাদের মনে প্রশ্ন, আমরা কেন রক্ত দিতে যাইব? মৌলিক পরিবর্তন যেখানে অসাধ্য, সেখানে সাবেক হুকুম বহাল থাকাটাই কি কাম্য নহে?

 

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন