সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি

আপডেট : ২১ মে ২০২৩, ০৩:০২

দীর্ঘদিনের গড়িমসির পর এবার ইউক্রেনকে মার্কিন অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে সহায়তা করতে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে সম্মতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার হিরোশিমায় চলমান জি-৭ সম্মেলনের বৈঠকে এমন কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওয়াশিংটনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এ কথা জানিয়েছেন। তবে রাশিয়া বলেছে, কোনো দেশ যদি ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়—তাহলে তারা বিরাট ঝুঁকির মুখে পড়বে।

হিরোশিমায় সাংবাদিকদের সুলিভান বলেন, ‘ইউক্রেনের পালটা হামলা সফল করার জন্য গত কয়েক মাস ধরেই কিয়েভকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও ট্রেনিং সহায়তা দেওয়া নিয়ে ভাবছিলাম আমরা। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।’ তিনি জানান, অত্যাধুনিক এফ-১৬ পরিচালনা করতে কিয়েভের পাইলটদের প্রশিক্ষণও দেবে মার্কিন সেনারা। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আমদানিকৃত মার্কিন সরঞ্জাম অন্য দেশে রপ্তানি করতে আইনি অনুমোদন প্রয়োজন হয়। মিত্র দেশগুলোর জন্য ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান দিয়ে সহায়তা করার এ পথ খুলে দিল যুক্তরাষ্ট্র। সুলিভান বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এবার ইউক্রেনের বিমানবাহিনী উন্নতির দিকে মনোযোগ দেবে। কবে, কখন, কতগুলো যুদ্ধবিমান পাঠানো হবে এবং কোন কোন দেশ সেগুলো পাঠাবে, তা মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জানাবো আমরা।’

পশ্চিমা মিত্রদের কাছে বরাবরই যুদ্ধবিমান চেয়ে আসছিল ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ নিয়ে শনিবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, ‘এই পদক্ষেপ আমাদের বিমান বাহিনীকে উন্নত করতে ব্যাপক সাহায্য করবে।’ তিনি বলেন, রবিবার জি-৭ সম্মেলনের আলোচনায় পদক্ষেপটির ব্যবহারিক বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করবেন। শুক্রবার থেকে জাপানের হিরোশিমায় চলছে জি-৭ সম্মেলন। তবে রাশিয়া বলেছে, কোনো দেশ যদি ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়—তাহলে তারা বিরাট ঝুঁকির মুখে পড়বে। রুশ সরকারি সংবাদমাধ্যমে ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্ডার গ্রুশকো বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো উত্তেজনা বাড়ানোর রাস্তা নিয়েছে।

‘আমাদের সকল পরিকল্পনায় এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে এবং আমাদের নিজ লক্ষ্য অর্জনের সকল উপায় আমাদের হাতে আছে,’ বলেন তিনি।

ইউক্রেনের আশা পূরণ : ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ অভিযান শুরুর সময় ইউক্রেনের হাতে ১২০টি যুদ্ধবিমান ছিল বলে মনে করা হয়—যা প্রধানত সোভিয়েত যুগের মিগ-২৯ এবং সু-২৭ জাতীয়। কিন্তু কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতার সঙ্গে এঁটে উঠতে হলে ইউক্রেনের অন্তত ২০০ জেট দরকার। সে কারণে দেশটি বহুদিন ধরেই পশ্চিমা মিত্রদের কাছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চাইছিল—যা শব্দের চেয়ে দ্বিগুণ দ্রুতগামী এবং আকাশে ও স্থলভাগে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এফ-১৬-র মতো বিমান পেলে ইউক্রেন রুশ প্রতিরক্ষাব্যুহ অতিক্রম করে আক্রমণ চালাতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জোটের বেশ কিছু দেশ ইউক্রেনকে আধুনিক জেট দেবার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল, কারণ এতে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। কোনো দেশ আমেরিকার যুদ্ধসামগ্রী পেলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া তারা তা অন্য কারো কাছে বিক্রি বা রপ্তানি করতে পারে না। তাই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এ সিদ্ধান্তের ফলে ডেনমার্ক, বেলজিয়াম বা নেদারল্যান্ডের মতো দেশগুলো তাদের কাছে থাকা কিছু এফ-১৬ বিমান ইউক্রেনকে দিতে পারবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাত্রঁদ্ধ বলেছেন, তার দেশ ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতে ইচ্ছুক তবে তারা কোনো বিমান দেবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও ইউক্রেনীয় পাইলটদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করার কথা বলেছেন। তবে যুক্তরাজ্যের কোনো এফ-১৬ বিমান নেই।

 

ইত্তেফাক/ইআ